ঠিকাদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা না নেওয়া এবং পদ পদবী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেনকে।
দেলোয়ার হোসেনের সহকর্মী সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেনের সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমকে আটক করলে পরিকল্পিতভাবেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন।
গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্ত্রী খাদিজা আক্তার অভিযোগ করেছেন, ঠিকাদারদের শতকোটি টাকার ফাইল আটকে রাখার কারণে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে তার স্বামীকে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেলোয়ার ছিলেন একজন সৎ কর্মকর্তা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে তাকে প্রায় ছয় মাস (সেপ্টেম্বর-জানুয়ারি) ওএসডি করে রাখা হয়। এরপর তাকে বদলি করা হয় কোনাবাড়ী অঞ্চলে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী অঞ্চল অফিস সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের ঠিকাদারদের কাজের পাওনা শতকোটি টাকার একাধিক ফাইল আটকা রয়েছে। এসব ফাইল তদন্ত করে ঠিকাদারি কাজে গাফিলতি পেয়েছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। ফাইলগুলো প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের টেবিলে আটকা পড়ে ছিল।
ঠিকাদারদের একটি চক্র ফাইলে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য তার কাছে বেশ কয়েকবার তদবির করেন। ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাবও তাকে দেওয়া হয়। কিন্তু দেলোয়ার কোনো অবস্থাতেই ঘুষ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ারের সঙ্গে ঠিকাদারদের প্রকাশ্যে বিরোধ শুরু হয়।
স্থানীয় কাউন্সিলর মো. সেলিম রহমান বলেন, তিনি ভদ্রলোক ছিলেন। যতোটুকু জানা যায় ঠিকাদারদের কাছ থেকে কোন সুবিধা বঞ্চিত হওয়া এবং পদপদবী নিয়ে দ্বন্দের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে আসামিরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার আশ্রয়-প্রশ্রয় না পাওয়া থেকে এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে। আসামিরা আদালতে জাবানবন্দি দিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কেউই যেন রেহাই না পায়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিরও দাবি করেন সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। বলেন: প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার কাজ পরিচালনা করা হোক, যাতে জড়িতদের মধ্যে কেউই আইনের ফাঁকে বেরিয়ে যেতে না পারে।
গত ১১ মে সকালে মিরপুরের বাসা থেকে দেলোয়ারকে আনতে গাজীপুর সিটি করপোরেশন অফিস থেকে নিয়মিত পাঠানো গাড়ি না গিয়ে অন্য একটি গাড়িটি যায়। ওই গাড়িতে করে দেলোয়ার গাজীপুরের কোনাবাড়ি অফিসের উদ্দেশে রওনা হলেও শেষ পযন্ত আর অফিসে পৌঁছতে পারেননি। ওই দিন দুপুরে রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১২ মে ডিএমপি‘র তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী সেলিম হোসেন, গাড়িচালক হাবিব ও ভাড়াটে খুনি শাহিন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রকৌশলী হত্যাকারীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ১৯৮৬-৮৭ ব্যাচের এ্যালামনাই শিক্ষার্থীদের সংগঠন ফোরাম-৮৬।