শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে সমর্থন জানানোয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) চার শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়াকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
সোমবার সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের এ সংগঠন থেকে একটি যৌথ বিবৃতি গণমাধ্যমকে পাঠানো হয়েছে। যেখানে ৬০ জন স্বনামধন্য শিক্ষক বিবৃতিতে সংহতি জানিয়ে সাক্ষর করেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে: সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অত্যন্ত অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকরভাবে চারজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এই অজুহাতে যে, ওই শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছেন। আসলে তারা যা করেছিলেন তা ছিল ২০২০ এর জানুয়ারি মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মৌলিক কিছু চাহিদার যৌক্তিক দাবির পক্ষে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একাত্মতা প্রকাশ করা; যা যেকোনো সচেতন শিক্ষকের কর্তব্য বলে আমরা মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধনেই জ্ঞানের চর্চা অগ্রসর হয়ে থাকে, এই বিষয়টি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের অজানা কিনা তা ভেবে আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হচ্ছি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৎকালীন আন্দোলনে উঠে আসা দাবিগুলো ছিলো- আবাসন সংকটের সমাধান, বেতন-ফিস কমানো, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের উৎকর্ষ সাধন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভূক্তিকরণ এবং অবহিতকরণ। শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত এই দাবিগুলোর কোনটাই অন্যায় কোন দাবি নয়, বরং তা অত্যন্ত ন্যায়সংগত এবং এসব তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। যেকোন বিবেকবান মানুষ শিক্ষার্থীদের এই দাবির পক্ষে থাকবেন এবং উক্ত শিক্ষকরা সেটাই করেছেন। এজন্য তাদেরকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

যোগকরা হয়: অথচ বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করা গেলো প্রশাসন মৌলিক দাবির আন্দোলনকে কিনা তাদের অসম্মানের বিষয় বলে ভাবছে, যেখানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নির্ভর করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান এবং মুক্তচিন্তার চর্চায় তারা কতটুকু উন্নত সেটার উপর; অথচ তা নাকি তাদের জন্য লজ্জার! আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাদের এহেন বিতর্কিত ভূমিকা জন্যই বরং আমরা লজ্জিত।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে: শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হয়েছিলো ১ জানুয়ারি ২০২০। সে ঘটনার পর প্রায় তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকার পরেও; এখন প্রায় ৯ মাস পর উক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কারণদর্শানোর নোটিশ দেয়া হলো। এছাড়া এআন্দোলনে আরও অনেক সম্মানিত শিক্ষক সমর্থন জানালেও, সুনির্দিষ্টভাবে এই চারজনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্ববর্তী কোন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলেই আমরা আশংকা করছি। উক্ত ছাত্র আন্দোলনের কাছাকাছি সময়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে একজন নারী নিয়োগপ্রার্থীর সাথে যৌননিগ্রহমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছিলো এবং আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি উক্ত ইস্যুতেও এই চার শিক্ষক নৈতিকভাবে অভিযোগকারিণীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন।
আরও বলা হয়েছে: কাজেই কারণ দর্শানোর নোটিশে সুনির্দিষ্ট করে উক্ত চারজনকে অভিযুক্ত করানোর প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ হিসেবেও ভাবার অবকাশ আছে বলে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে বর্তমান প্রশাসনের এই আচরণ অত্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ, ন্যাক্কারজক এবং হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা মুক্তচিন্তা, জ্ঞানচর্চা ও অন্যায়ের প্রতিবাদে প্রতিবাদী কন্ঠস্বরের কন্ঠরোধ এবং সুনির্দিষ্টভাবে নিজেদের কোন দুর্নীতি গোপনের প্রেক্ষিতে এরকম বিতর্কিত ভূমিকা নিয়েছেন বলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করছি এবং এইরকমের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার প্রতি তীব্র নিন্দাপ্রকাশপূর্বক, কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার ও উক্ত শিক্ষকদের আর কোন হেনস্থা না করার আহ্বান জানাই।