খাদ্য সুরক্ষা এবং জীবিকার জন্য সাহসী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো বদ্ধপরিকর।
করোনাভাইরাস এর কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি এবং দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতার চলমান প্রভাব থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য এই অঞ্চল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুনত্ব, সংহতি, একাত্মতা এবং দৃঢ় অংশীদারিত্ব দরকার বলে মনে করছে দেশগুলো।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ৪০টিরও বেশি সদস্য দেশের ১-৪ সেপ্টেম্বর চার দিনের আঞ্চলিক সম্মেলনে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এতে বলা হয়, বেসরকারী খাত এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ প্রায় ৭৫০ জনের অংশগ্রহণে খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর এবং সেগুলো আরও টেকসই, উৎপাদনশীল এবং স্থিতিস্থাপক করে তোলার জন্য কাজ করার এবং ক্ষুধার্ত বিশ্বকে এমনভাবে খাদ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যেটা কৃষকদের জন্যও লাভজনক হবে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত হবে।
ভুটান সরকারের আয়োজনে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৫তম আঞ্চলিক সম্মেলনের চূড়ান্ত দিনে এফএওর মহাপরিচালক বলেছেন: খাদ্য ব্যবস্থাকে স্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় রূপান্তর করতে আমাদের অবশ্যই সমন্বয়, অংশীদারিত্ব এবং সংহতি থাকতে হবে।
তিনি বলেন: বড় তথ্য, একটি ডিজিটাল অর্থনীতি এবং মোবাইল প্রযুক্তি এই অর্জনে সহায়তা করবে। আজ মোবাইল প্রযুক্তি উদ্ভাবনের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং ক্ষুদ্র কৃষকের হাতে একটি স্মার্টফোন তার নতুন কৃষিকাজের যন্ত্র।
সম্মেলনে এফএও এর অফিস অফ ইনোভেশন প্রতিষ্ঠা এবং ডিজিটাল খাদ্য ও কৃষির জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি সম্পর্কেও শেখানো হয়েছে।
সম্মেলনে বলা হয়, কৃষি উদ্ভাবন গোলামি বন্ধ করতে পারে। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য শৃঙ্খলা ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন যেমন ড্রোন, উপগ্রহ চিত্র, বড় তথ্য এবং ব্লক চেইনগুলি দিয়ে উপকৃত হচ্ছে।
মহাপরিচালক বলেন: উপাত্ত, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি প্রমাণ করেছে এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উজ্জ্বল মন, বিজ্ঞানী এবং একটি উদ্যোক্তা চেতনা রয়েছে যা করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলির মধ্য দিয়ে আমাদের নেতৃত্ব দেবে এবং অপুষ্টি ও দারিদ্র্য জয় করতে সহায়তা করবে।
সম্মেলনে কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের প্রয়োগের উপর একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, তরুণরা যেটা খুবই সমর্থন করে, এতে নারীদের ক্ষমতায়নও হয়েছে বলে জানায় অংশগ্রহণকারীরা। তারা বলছেন, নতুন ও উদ্ভাবনী খাদ্য ও কৃষি নীতি, প্রক্রিয়া, বিনিয়োগ এবং শিক্ষন এই অঞ্চলটিকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২ (ক্ষুধার অবসান ঘটাতে এবং টেকসই কৃষিকে উন্নীত করতে) অর্জন করতে সাহায্য করবে।
করোনাভাইরাস ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বের অপুষ্টির শিকার অর্ধেকেরও বেশি লোকের বসবাস। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আগামী দশ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় তৃতীয়াংশ থেকে ৩৩০ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেতে পারে।
সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন ভুটানের কৃষি ও বনমন্ত্রী ইয়েশে পেনজোর, যিনি সহযোগিতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন: যদিও অনেক দেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধা হ্রাস করার জন্য বড় বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, কিন্তু করোনাভাইরাস এই গতিবেগকে স্থগিত করেছে। আমাদের অবশ্যই উচ্চতর ঝুঁকির জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে খাদ্য সরবরাহে শৃঙ্খলা রয়েছে।
এফএও এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালভাবে আঞ্চলিক সম্মেলন পুরোপুরি অনুষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ডিরেক্টর জেনারেল কিউইউ বলেন: মজার বিষয় হলো, করোনাভাইরাস আমাদের দূর থেকে দেখা করতে উৎসাহিত করেছে। এভাবেই কিছু উপায়ে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে এবং একত্রে ঘনিষ্ঠ হতে সাহায্য করেছে। ১১টি আলাদা আলাদা টাইম জোন যখন আমাদের বিচ্ছিন্ন করেছে তখনও আমরা একত্রিত হতে পেরেছি, চিন্তাভাবনামূলক আলোচনা করেছি এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছেছি।