করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে আরো মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান।
রোববার অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম-ইআরএফ আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এ আহ্বান জানান।
ড. মাসুদুর রহমান বলেন, গত ৮ বছরে এসএমই খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চাহিদাও। তাই অর্থনীতিতে চার ভাগের এক ভাগ অবদান রাখা এসএমই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
কর্মশালায় অনলাইনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যাতে অর্থনীতিকে আরও বেশি কাবু করে না ফেলে, সে জন্য এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনেই দোকান-পাটসহ অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করতে হবে। শিল্প খাতকেও চাঙ্গা রাখতে হবে। শিল্প খাত যেন বসে না যায়, সে জন্য কর্মসংস্থান বজায় রাখতে আরেক দফা কম সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (এসএমই) প্রণোদনা আরো বাড়ানো দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ দেয়ার সময় বাড়ানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধনের সময়ও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কর্মসংস্থান বজায় রাখতে শিল্প খাতের জন্য আর এক দফা ঋণ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের ছোট ঋণ দেয়ার পরামর্শ দিয়ে আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতিকালে অনুমোদন দিয়েছে- সিটি ব্যাংক ও বিকাশ মিলে তারা ১০ হাজার টাকার ছোট ঋণ এসএমইকে দিতে পারে। এটা মাত্র ৩ মিনিটে অনুমোদন হয়ে যায়। এই অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হয়ে থাকলে, ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের জন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্যাশ ফ্লোর হিসাব দেখে ই-কেওয়াইসি নিয়ে ১০, ২০, ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ দেয়া যেতে পারে। ৬ মাস বা এক বছরের জন্য এই ঋণ দেয়া যেতে পারে।
সাবেক এই গভর্নর বলেন, ধোলাই খাল থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের কোনো পণ্য কিনতে হলে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হয়। কিন্ত চীন থেকে আমদানি করতে সেই পণ্যে ট্যাক্স লাগে না। এই বিষয়ে নীতি সহায়তা দিতে হবে। সেই সঙ্গে গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্টের একটি অংশ এসএমই’র জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। ভারতে এটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
সভায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন হারে কর আরোপের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছ পণ্য কিনতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, তার চেয়ে কম খরচে সেই পণ্য আমদানি করা যায়। তাই বড় শিল্পগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কাছ পণ্য কিনতে চায় না। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া প্রয়োজন।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এসএমই খাত দেশের অর্থনীতির প্রায় সব খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই খাত অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি- তা শুধু বললেই হবে না, এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নীতিগত ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এসএমই ফাউন্ডেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ বিতরণে কাজে লাগানো উচিত।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইআরএফ-এর সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।