মানবজাতির দিশার জন্য মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যে শ্রেষ্ঠ উপহারটি নিয়ে এসেছেন তা হলো পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। এ মহা উপহার যে মাসে অবতীর্ণ, সে রমজানকে আল্লাহ তা’আলা সর্বশ্রেষ্ঠ মাসের মর্যাদা দান করেছেন, আর যে রজনীতে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে, সেই রাতটিও হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রজনী হিসেবে মর্যাদা প্রাপ্ত হয়েছে। যেহেতু পবিত্র রমজান মাসেই কোরআনের আগমন তাই এ মাসের সাথে কোরআনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতকে সমস্ত নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠে নফল ইবাদত। নিম্নে কোরআন তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
(১) কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, “যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না” (আল-কোরআন)।
(২) কোরআন তিলাওয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ নফল ইবাদত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কোরআন তিলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত। তোমরা কোরআন তিলাওয়াত কর, কারণ কিয়ামতের দিন কোরআন পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে” (সহিহ মুসলিম)।
(৩) কোরআনের প্রত্যেকটি হরফের বিনিময়ে ১০টি করে নেকি দান করা হয়। যেমন- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, সে একটি নেকি পায়, আর প্রত্যেকটি নেকি ১০টি নেকির সমান” (সুনানে তিরমীজি)।

(৪) কোরআনের প্রতিটি আয়াত তিলাওয়াতের বিনিময়ে একটি করে উট সদকার সাওয়াব প্রদান করা হয়। যেমন হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে হতে যে ব্যক্তি সকালে মসজিদে দু’টি আয়াত পাঠ করে বা শিখে, তাকে দু’টি উট সদকা করার সওয়াব দেয়া হবে। এভাবে যত বেশি আয়াত তিলাওয়াত করবে, ততো বেশি উট সদকা করার সওয়াব প্রদান করা হবে” (সহিহ মুসলিম)।
(৫) কিয়ামতের ময়দানে কোরআন তার তিলাওয়াতকারীর জন্য শাফায়াত করবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রোজা এবং কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি। আপনি আমার সুপারিশ কবুল করুন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করবেন” (বায়হাকি শরীফ)।
(৬) শুধু কোরআন তিলাওয়াতকারী নয় বরং তার পিতা-মাতার জন্যও কিয়ামতের ময়দানে পুরস্কার রয়েছে। যেমন হাদিসে পাকে বর্ণিত হয়েছে- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে তার উপর আমল করেছে, তার পিতা-মাতাকে কিয়ামতের দিন এমন একটি টুপি পরিধান করানো হবে, যার কিরণ সূর্যের কিরণ হতে উজ্জ্বল দেখাবে, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার কি ধারণা যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং তার হুকুম অনুযায়ী আমল করে?” (আবু দাউদ )।
(৭) কোন স্থানে একত্রিত হয়ে কোরআন তিলাওয়াত করলে তাদেরকে রহমতের ফেরেশতারা বেষ্টন করে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে নিয়ে আলোচনা করে। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “কোন সম্প্রদায় আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কোরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তা পঠন ও পাঠন করে, তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে এবং আল্লাহ তা‘আলা নিকটস্থ ফেরেশতাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন” (সহিহ মুসলিম)।
(৮) কোরআন তিলাওয়াতকারী কিয়ামতের ময়দানে শাফায়াতের অধিকারী হবেন। এ বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআন পড়েছে এবং মুখস্থ করেছে, অতঃপর হালালকে হালাল এবং হারাম জেনে আমল করেছে, তাকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন যাদের দোযখবাসী হওয়া অবধারিত ছিল” (ইবনে মাজাহ)।
(৯) কোরআন শিক্ষাদাতা ও গ্রহণকারী সর্বোত্তম মানুষ হিসেবে মর্যাদাপ্রাপ্ত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যিনি কোরআন মজিদ শিক্ষা করে ও অন্যকে শিক্ষা দেয়” (সহিহ বুখারী)।