চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

কোনদিকে যাচ্ছে চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ?

যুক্তরাষ্ট্র আর চীনের মধ্যে বাণিজ্য জটিলতা চলছে বেশ অনেকদিন ধরেই। ট্রাম্প সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই শুরু হয় এই দ্বন্দ্ব। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের চীনের ওপর, জবাবে চীনের যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বড় অঙ্কের বাণিজ্য কর চাপানোর হুমকি। তারপর সেই হুমকি বাস্তবায়নের ঘোষণা।

সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সংকট গুরুতর আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে গত সপ্তাহে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের ওপর এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় আকারের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

Bkash July

অস্ত্র নিয়ে সম্মুখযুদ্ধের বদলে এখন এই দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে শুরু হয়েছে তার চেয়েও বড় লড়াই: বাণিজ্য যুদ্ধ। যে যুদ্ধে দু’পক্ষ একে অপরের দিকে গোলাবারুদ নয়, ছুঁড়ে মারছে নানা ধরনের অযাচিত শুল্ক।

গোলাবর্ষণের মতো ‘শুল্কবর্ষণ’
স্থানীয় সময় ১৭ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতের খানিক পরেই চীনের ২শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর নতুন করে আরও ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন। এই তালিকায় রয়েছে খাবারের মশলা, বেসবল দস্তানা, নেটওয়ার্ক রাউটারের মতো দৈনন্দিন সরঞ্জাম থেকে শুরু করে শিল্পকারখানায় ব্যবহারোপযোগী নানা যন্ত্রাংশসহ হাজারো পণ্য।

Reneta June

নতুন ঘোষিত শুল্কের ফলে এসব চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত মোট কর দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। চলতি বছরের শেষের দিকে নতুন কর বাস্তবায়িত হবে।

এর আগে এ বছরেরই প্রথমার্ধে চীনের আরও ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর করারোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যার অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রে চীন মোট যে পরিমাণ পণ্য বিক্রি করে সব মিলিয়ে তার প্রায় অর্ধেকই এখন থেকে প্রতি বছর আমেরিকান উচ্চ শুল্কের মুখে পড়বে।যুক্তরাষ্ট্র-চীন-বাণিজ্য যুদ্ধ-ডোনাল্ড ট্রাম্প

বছরের প্রথম দিকে আরোপিত শুল্কগুলো মূলত ছিল কলকারখানার বা নির্মাণ সামগ্রীর ওপর। কিন্তু এবারের শুল্কভুক্ত তালিকায় যোগ হয়েছে আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মতো আমেরিকানদের নিত্য ব্যবহার্য অসংখ্য চীনা পণ্য।

অবশ্য চুপ করে থাকেনি চীন। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপানোর জবাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পরই মাংস, রাসায়নিক দ্রব্য, পোশাক এবং যানবাহনের যন্ত্রাংশসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করা ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর ৫ থেকে ১০ শতাংশ করে নতুন কর যোগ করে চীন।

পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, নতুন শুল্কগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের জন্য শাস্তি। কারণ চীন অন্যায় বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। এমনকি অন্যান্য দেশের পণ্যের অনুকরণ করে পণ্য তৈরির ব্যবসা করে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি চুরির অভিযোগও এনেছে মার্কিন সরকার দেশটির বিরুদ্ধে।

বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের এসব দাবি অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বরং নিজ অর্থনীতিকে বাহ্যিক প্রতিযোগিতা থেকে বাঁচানোর জন্য একদিকে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পথ বেছে নিয়েছে, আর অন্যদিকে অন্যান্য দেশগুলোকে ভয় দেখাচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন শুল্ক তালিকা ঘোষণার পর সেদিনই চীন সরকার এ দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে একটি বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করে। ওই বিবৃতিতে দেশটি দাবি করে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে এবং চীনকে তীব্র চাপের মধ্যে রেখে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে এ বিবৃতি প্রকাশিত হয়।যুক্তরাষ্ট্র-চীন-বাণিজ্য যুদ্ধ-ডোনাল্ড ট্রাম্প

চীনা-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধে আশঙ্কায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই লড়াই এত জলদি থামবে না। বরং পরিস্থিতি দ্রুতই আরও খারাপ হবে।

ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান লুই কুইজ বলেছেন, গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ও বেইজিং ঘোষিত এসব নতুন শুল্ক তাদের অর্থনৈতিক সংঘাতে নতুন মাত্রা নির্দেশ করছে। এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও গুরুতরভাবে আঘাত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয় এমন আরও ২৬৭ বিলিয়ন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এমনটা হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে রপ্তানিকৃত সব পণ্যই এই বর্ধিত শুল্কের আওতায় চলে আসবে।

ট্রাম্পের হুমকি এভাবে বাস্তবায়িত হলে চীনও যে থেমে থাকবে না তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অর্থাৎ পরিস্থিতি সত্যিই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে তার চেয়ে অনেক, অ-নে-ক কম পরিমাণ পণ্য। ফলে পাল্টা শুল্ক আরোপের জন্য যথেষ্ট মার্কিন পণ্য হয়তো এক পর্যায়ে খুঁজে পাবে না দেশটি।

তবে প্রতিশোধ নেয়ার আরও অনেক বিকল্প চীনের কাছে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন, চীন ইতোমধ্যে শুল্কভুক্ত পণ্যগুলোর শুল্ক আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, আমদানি কোটা আরোপ করতে পারে, চীনের নাগরিকদের ভ্রমণ ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে, এমনকি শুল্ক প্রভাবিত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর কমিয়ে দিতে পারে।যুক্তরাষ্ট্র-চীন-বাণিজ্য যুদ্ধ-ডোনাল্ড ট্রাম্প

বাড়ছে সন্দেহ, কমছে সমঝোতার সুযোগ
ট্রাম্প প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো উভয় পক্ষের জন্য বিনা শুল্ক ও বিনা ভর্তুকিতে মুক্ত বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করা।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্দেশ্যের ওপর থেকে ক্রমেই বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে চীনের। দানা বাঁধছে সন্দেহ।

বেইজিংয়ের আইনি সংস্থা কোভিংটন অ্যান্ড বার্লিংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার টিমোথি স্ট্র্যাটফোর্ড সিএনএন’কে বলেন, চীন বরং এখন আশঙ্কা করছে যে যুক্তরাষ্ট্র এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে তাদেরকে দমিয়ে রাখতে চাইছে।

‘একটা পর্যায়ে এসে এই প্রক্রিয়ায় একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে বলে আমার ধারণা,’ বলেন টিমোথি।

শুল্ক ব্যবস্থা নিয়ে ট্রাম্পের এই তাড়াহুড়ো দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আলোচনার পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View