‘এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, আমার এই ঘরে থাক আলো করে’। ধনের দেবী লক্ষ্মী। প্রায় প্রতি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। মহিষাসুরমর্দিনীর আগমনে আনন্দময় হয়ে উঠেছিল ধরনী। জীবনের জ্বালা ভুলে মানুষ মেতেছিল উৎসবের আনন্দে। চিন্ময়ীর বিদায়ের বার্তা ভুলে মানুষ আবার মেতে উঠছে লক্ষ্মী পূজার উৎসব ও আনন্দে।
সৌভাগ্য ও ধন সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রী শ্রী লক্ষ্মী মায়ের পূজা শুরু হয়েছে ২৬ অক্টোবর (সোমবার)। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। চলতি বছর দু’দিনে পূর্ণিমা তিথি হওয়ায় সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সনাতন হিন্দু ধর্মাবলমন্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব এটি। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নগরীর ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ধন সম্পদের দেবী হওয়ায় বিভিন্ন মন্দির ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
মা আসবেন ধরনীতে ধন সম্পদে পূর্ণবান হয়ে। অন্নপূর্ণার আলতা রাঙা পায়ের চিহ্ন আঁকা হবে ঘরে ঘরে। ধন-সম্পদের আশায় হিন্দু নারী ও পুরুষেরা উপবাস ব্রত পালন করেন। ফুল ফল মিষ্টি নৈবেদ্য দিয়ে আরাধনা করবেন লক্ষ্মী মায়ের। দেন পুস্পাঞ্জলী।
লক্ষ্মী হিন্দুদের ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক ও পার্থিব উন্নতি, আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, উর্বরতা, দানশীলতা, সাহস ও সৌন্দয্যের দেবী। বাঙালি হিন্দুদের বিশ্বাসে লক্ষ্মীদেবী দ্বিভূজা। তার বাহন হচ্ছে পেঁচা। অবশ্য বাংলার বাইরে লক্ষ্মীর চতুর্ভূজা কমলে-কামিনী মূর্তিই দেখা যায়। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষে প্রথম পূর্ণিমা তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লক্ষ্মীপূজা করে থাকেন।
বাংলাদেশে চান্দ্র আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে অর্থাৎ কোজাগরী পূর্ণিমায় দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বৃহস্পতিবার সধবা স্ত্রীগণ লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন।
কিন্তু বাংলার বাইরে দেবী পূজিতা হন গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে অর্থাৎ দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত্রে। এই পূজা সাধারণত বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার পরেই হয়ে থাকে। লক্ষ্মীপূজা কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা নামেও পরিচিত। কোজাগরী শব্দটি এসেছে ‘কো জাগর্তি’ থেকে, যার অর্থ ‘কে জেগে আছো?’।
সনাতনী বিশ্বাস মতে,এ রাতে মা লক্ষ্মী ধন-সম্পদ দিতে যে কোনো সময় ঘরের দ্বারে এসে ‘কো জাগর্তি’ বলে ডাক দেন। জেগে থাকা মানুষেরাই এ ধন লাভের অধিকারী হয় বলে ব্রতকারীরা এজন্য সারা রাত জেগে থাকেন মায়ের ডাকের প্রতীক্ষায়।
পঞ্জিকা মতে, সোমবার রাত সাড়ে আটটায় পূর্নিমা লেগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত থাকবে। তাই দুদিনই কোজাগরী লক্ষ্মী মায়ের পূজা উদযাপন করবেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালী মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ-মন্দির, পঞ্চানন্দ শিব মন্দির , গৌতম মন্দির, রাধামাধব বিগ্রহ মন্দির, রাধা গোবিন্দ জিও ঠাকুর মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির এবং পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজার, সূত্রাপুর, ফরাশগঞ্জ, লক্ষ্মীবাজার, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘরোয়া পরিবেশে লক্ষ্মীপূজার বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।