সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে তিন বছরের জন্য এ নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মোহাম্মদ ইসমাইল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ রাজাপুর-কাঠালিয়া আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান, স্নাতকোত্তর, এলএলবি ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও সমাজবিজ্ঞানে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন। মোহাম্মদ ইসমাইল ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার নিজগালুয়া গ্রামে জম্মগ্রহণ করেন। সম্প্রতি কৃষি ব্যাংকসহ নানা ব্যাংকিং ইন্স্যুতে একান্ত সাক্ষাতকারে কথা বলেন তিনি।
প্রশ্ন: আমরা জানি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রায় ৮শটি ব্র্যাঞ্চ অনলাইনে সেবা দিচ্ছে। আরও প্রায় ১ হাজারের বেশি ব্র্যাঞ্চ অনলাইনে আনার প্রক্রিয়া চলছে। কোর ব্যাংকিংয়ে আধুনিকতার ক্ষেত্রে কৃষি ব্যাংকের ভাবনা কী?
মোহাম্মদ ইসমাইল: প্রাইভেট ব্যাংকগুলো যতো তাড়াতাড়ি অনলাইনে কাজ করছে। আমাদের ব্যাংকগুলো এতো তাড়াতাড়ি অনলাইনে আনা সম্ভব না। কারণ আমাদের কৃষি ব্যাংকের বেশিরভাগ শাখাই গ্রামে।প্রাইভেট ব্যাংকের কাস্টমার আর আমাদের কাস্টমারের ক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য আছে। বেসরকারি ব্যাংক মুহূর্তের মধ্যে একাউন্ট খুলে টাকা ট্রানজেকশন করে। কিন্তু আমাদের পক্ষে তা সম্ভব না। কারণ তাদের ম্যান পাওয়ারও ওই ভাবে ট্রেইন আপ। তাই আমাদের পক্ষে ওইভাবে সম্ভব না। কিন্তু আমরা মর্ডানাইজড হয়েছি এইভাবে- আপনি যদি এখনই কোন টাকা পাঠাতে চান তাহলে আমাদের যেকোন ব্রাঞ্চ অর্থাৎ ১ হাজার ৩৮ টা ব্র্যাঞ্চের যেকোন শাখায় তা পাঠানো সম্ভব। বিদেশ থেকে যে টাকাগুলো আসে সেই টাকা কিন্তু তার পরিবারের মানুষ মুহূর্তেই পেয়ে যায়। প্রাইভেট ব্যাংকের মত অতোটা সফিস্টেকেডিটভাবে আমরা সেবা দিতে পারি না কিন্তু আধুনিক সময়ে দ্রুত সেবা দিতে আমরাও সক্ষম অন্য যেকোন ব্যাংকের মত।
প্রশ্ন: কৃষকদেরকে আরও কম্প্ল্যায়েন্ট ওয়েতে সার্ভিস দেওয়ার ব্যাপারে আপনারা কী ভাবছেন?
মোহাম্মদ ইসমাইল: কৃষি ব্যাংকের সব ব্যাঞ্চই অনলাইনে আনার প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু যেসব শাখা অনলাইনে নেই। সেই সব শাখাতে কুইক সার্ভিস আমরা এখনই দিতে পারছি।
প্রশ্ন: কৃষকদের ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া কতোটা সহজ আছে?
মোহাম্মদ ইসমাইল: ঋণ দেওয়ার প্রক্রিয়া যে অতটা সহজ তা আমি বলবো না। যদিও মুখে মুখে বলা হয় কোলাটেরল ফ্রি কিন্তু বাস্তবে তা অতোটা সহজ নয়। কারণ কোলাটেরল নেওয়ার পরেও আমি যে টাকা দিচ্ছি তা ফেরত পাচ্ছি না। তাহলে কোলাটেরল না নিলে কী হবে?
প্রশ্ন: কোলাটেরলের ব্যাপারে এতোটা আগ্রহ ব্যাংকগুলোর? এতে তো সিস্টেম অনেক লেনদী করছে এবং মানুষের আস্থা কমছে ব্যাংকগুলোর প্রতি?
মোহাম্মদ ইসমাইল: আবার সেই পরিবেশের প্রশ্ন আসছে। আপনি দুইটা সাইড যদি প্লেন হয় তাহলে ঘর্ষণ কম হয়। আর দুইটা যদি প্লেন না হয় তাহলে ঘর্ষণ বেশি হয়। এই জায়গায় কেউ কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে পারে না। তাই কেউ সহজ হতে পারছে না। এটার পরিবর্তনে সময় লাগবে।তবে আস্তে আস্তে এর পরিবর্তনে হচ্ছে।
প্রশ্ন: ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও সিঙ্গেল ডিজিটে থাকছে না- কেন?
মোহাম্মদ ইসমাইল: এটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের উপরে নির্ভরশীল নয়। এটি অনেকগুলো ফ্যাক্টরের উপরে নির্ভরশীল। এই ক্ষেত্রে নয় ছয় গুরুত্বপূর্ণ।আমি ছয়তে নেবো নয়তে দেবো। কিন্তু যদি দশেই নেয় তাহলে তিনি নয়ে দেবেন কিভাবে? কিন্তু সরকারি ব্যাংক হিসেবে কৃষি ব্যাংক ১০০ ভাগ নয় ছয় নীতি মানি। নয় পারসেন্ট ইন্টারেস্টে গ্রাহকের টাকা নেই আর ছয় পারসেন্ট ইন্টারেস্টে ঋণ দেই। কিন্তু প্রাইভেট ব্যাংকের পক্ষে এই সিঙ্গেল ডিজিট মানা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ তারা আমানত সংগ্রহ করছে উচ্চসুদে তাই তারা লেন্ডিংও করছে উচ্চ হারে। এটা তারা করতে বাধ্য হচ্ছেন। তা না হলে ব্যাংক হিসেবে তাদের টিকে থাকা মুশকিল হবে।
প্রশ্ন: আরেকটি ব্যাপার মনে হয়- এখানে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে যে, আগে তো এতো দিতো- এখন কেন দিচ্ছেন না?
মোহাম্মদ ইসমাইল: ফ্রি ইকোনমিতে ফিক্স আপ করা যায় না। কন্ট্রোলড ইকোনমিতে করা সম্ভব। পারবে- কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় অনেক বিষয় আছে যেগুলো ঠিক করে দিতে হবে।
প্রশ্ন: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন এর ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মত বা আরও আধুনিক কোন সিস্টেম কৃষি ব্যাংকের পক্ষে কী সম্ভব ছিল না?
মোহাম্মদ ইসমাইল: সম্ভব ছিল না- এটি একটা প্রশ্ন? হয়তো অনেক আগে করা উচিৎ ছিল। আমরা এইগুলোতে যাচ্ছি। মানুষের বেসিক যে বিষয়টা দরকার তা হলো- বাইরের সাথে যোগাযোগ। সেই বিষয়টি কিন্তু কৃষি ব্যাংক করে ফেলেছে। এখন কৃষি ব্যাংকের দরকার ইনক্লুশন। আরও অনেক মানুষকে টাকা দেওয়া দরকার। সরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংকের কাছে টাকা পড়ে থাকে। আমরা কৃষি ব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি- আরও বেশি বেশি লোন দিতে। উদাহরণ দিতে চাই- একটা গরু। গরুর যদি একটি ফার্ম করতে পারে কেউ। সেখানে যদি আমরা টাকা দেই। এটি কিন্তু বড় ধরণের ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটি। কিভাবে? ১০০ গরু আমি পালন করলাম। আর সেখানে যদি আমি টাকা দেই। তাহলে এমপ্লয়মেন্ট অপরচুনিটি বাড়লো। মানুষের অ্যাভেল অ্যাবেলিটি বাড়লো এবং ওইটা দেখে আরও একজন কেউ করলো। এই ভাবে গবাদী পশু রপ্তানি করা সম্ভব।
প্রশ্ন: অনেক ক্ষেত্রে বলা হয়- কৃষি ব্যাংক বড় ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী এদেরকেই লোন দেয়?
মোহাম্মদ ইসমাইল: নট অ্যাট অল। কারণ কৃষি ব্যাংকের লোনগুলোই ছোট। কৃষি ব্যাংকে রাজনৈতিক প্রভাব নেই বললেই চলে। আমরা ম্যাক্সিমাম টাকা দেই কৃষকদের এবং তা স্মল লোন। আমরা এখন চেষ্টা করছি। কৃষির প্যাটার্ন বদলে গেছে। কৃষি ব্যাংক এক সময় দুই হাজার টাকা লোন দিতো গরু কেনার জন্য।তা আর এখন দরকার নেই। কেউ আর এখন লোন নিতে চায় না। এখন ১ লাখ টাকার নীচে গরু নাই। গরুর চাষও নাই। কোন গ্রামে গরুর চাষ হয় না। এখন ট্রাক্টর। সরকারও চাচ্ছে মেকানাইজড এগ্রিকালচার। যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া উপায়ও নাই।
প্রশ্ন: হয়তো মোটর কিনবে একটা?
মোহাম্মদ ইসমাইল: হ্যাঁ। এইসব জায়গায় আমরা লোন দিচ্ছি। কিন্তু মিল এখনো হয় নাই। আই অ্যাম নট স্যাটেসফাইড। কারণ আমরা চাচ্ছি আরও ইমপ্রুভ করতে।
প্রশ্ন: আপনাদের পরিকল্পনা কী এখন?
মোহাম্মদ ইসমাইল: আমরা চেষ্টা করছি মুহূর্তের মধ্যে লোন দিতে না পারি। অন্তত দুই তিন দিনের মধ্যে কৃষক যাতে লোন পায় এবং বারবার যাতে কৃষকদের আমাদের কাছে না আসতে হয়। দ্রুতি এবং সম্মানের সাথে কৃষকরা যাতে লোন পায় সেই লক্ষে আমরা কাজ করছি। কেউ যাতে ব্যাংকে বসে না বসে থাকে। কারণ কৃষকের সময়ের দাম আছে। কেউ লুঙ্গি পড়ে এলে তাকে ছোট মনে করা হবে তা নয়। চা খাইয়ে কৃষকদের আপ্যায়ন করতে হবে ব্যাংকে। তাকে সময় মতো সেবা দিতে হবে-এই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি।