করোনভাইরাস সংকট ও লকডাউনের কারণে কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুতুবদিয়ার সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অসহায়, দারিদ্র, কর্মহীন দিনমজুর, নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত, জেলে, ও প্রবাসীদের পরিবারগুলোর মাঝে দিনে-রাতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি মানবিক দল।
এলাকার আইনশৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি এ কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাড়ানো পুলিশ কমর্কর্তার মানবিকতাকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারন মানুষ।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় কুতুবদিয়া থানার ওসি’র নেতৃত্বে অসহায় দিনমজুর শ্রেণির মানুষের ঘরে ঘরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, আটা, আলু, পেয়াজ, সাবান ও তেলসহ) তুলে দিচ্ছন। আর এ কাজটি করছে থানা পুলিশের একটি মানবিক দল।
ওসি মো. দিদারুল ফেরদৌস বলেন: শুরুতেই উপজেলা গেইট, হাসপাতাল গেইট ও কলেজ গেইটে জনসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে জীবাণুনাশক স্প্রে ও মাস্ক বিতরণ করি। পাশাপাশি সতর্কবার্তা লিফলেট হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিদের নজরদারী, হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ, দোকানে জনসমাগম দূরত্ব ও শৃংখলা বজায় রাখতে কাজ করি।
তিনি বলেন: এই কার্যক্রমই আমাদের শেষ না, ধারাবাহিক ভাবে এই কার্যক্রম চলতে থাকবে। আপনারা বাড়িতে থাকুন, সরকারের নির্দেশ পালন করুন। খাবার শেষ হয়ে গেলে আবারো আমরা আপনাদেরকে খাবার দিয়ে যাবো। আমরা জনসমাগম করে ত্রাণ বিতরণ করছি না। অসহায় মানুষের দ্বারে গিয়ে তাদের হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছি।
এছাড়াও মানবিকতায় এগিয়ে থাকা কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার ওসি’র দুই মাসের বেতন ও সংশ্লিষ্ট থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মাসিক বেতনের তিন দিনের সমূদয় অর্থ এবং স্থানীয় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের অনুদানে ফান্ড গঠন করে এলাকার রিক্সা শ্রমিক, টেম্পু শ্রমিকদের ত্রাণ দেয়াও অব্যাহত রাখেন।
করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়া ধুরং বাজারের চায়ের দোকানের কর্মচারী শফিউল আলম বলেন: ওসি’র দেওয়া চাল ডাল দিয়ে পরিবারের খাবার চলছে গত এক সপ্তাহ ধরে।
বড়ঘোপ এলাকার ইজি বাইক চালক রহিম উল্লাহ বলেন: করোনার কারণে আমার গাড়ি চালানো বন্ধ, বেকার বসে আছি। এসময় পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া ত্রাণ দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি।
এর আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কুতুবদিয়া থানা পুলিশের উদ্যোগে উপজেলার ধুরং বাজারের আশপাশে, লেমশিখালি, উত্তরধুরং আকবর বলী ঘাট, হামজাখালী, বিদ্যুৎ মার্কেট, জেলে পাড়া, হিন্দুপাড়া, মলমচর, বাজার মোড়, বড়ঘোপ মগডেইল-আলী আকবর ডেইল, মাহিন্দ্রা হিউম্যান হুইলার গাড়ি চালক হেলপার, জীপ গাড়ির ড্রাইভার হেলপার, আত্মসমর্পনকারী ১৪ জলদস্যু পরিবারসহ দেড় হাজারেরও অধিক পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করেন।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল ফেরদৌস বলেন: অনেক প্রবাসীরা ফোন দিয়ে তাদের পরিবারের খোঁজ নিতে বলেন, ওইসব পরিবারে রাতের বেলায় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। আবার অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন হটলাইনে ফোন করে সাহায্য প্রার্থনা করেন, তাদের নাম-ঠিকানা গোপন রেখে কেউ যাতে না দেখে সেভাবে তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে আমার মানবিক পুলিশ টিমের সদস্যরা। যতদিন এই সঙ্কট থাকবে আমাদের পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় ততদিন এসব মানুষগুলোকে সাধ্যমতো সহায়তা দিয়ে যাব।
তিনি বলেন: দ্বীপের কেউ আর্থিক সংকট কিংবা অনাহারে থাকলে পুলিশের এ হটলাইন ০১৮৪৩-৩৩৩১৪৪, ০১৭৭৭-৮১০০৪৬ ফোন দেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
পুলিশের এ মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকাবাসী।