লেখক মুশতাকের মৃত্যুতে আর্টিকেল নাইনটিনের নিন্দা, তদন্ত দাবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বন্দীদের মুক্তি দাবি
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে আর্টিকেল নাইনটিন তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি এই মৃত্যুর তদন্ত দাবি করছে। অন্যদিকে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ দেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দীদের মুক্তি চেয়েছে সংগঠনটি।
বিবৃতিতে বলা হয়: ‘‘মুশতাক আহমেদের পিতা আবদুর রাজ্জাক জানান, ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে টেলিফোনের মাধ্যমে কারাগার থেকে মুশতাকের মৃত্যুর খবর তাদের জানানো হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি মুশতাককে আদালতে হাজির করা হয়। ওই দিন আদালতে আমার ভাতিজা মুশতাকের সঙ্গে কথা বলেছিলো। সে সময়ে সে সুস্থ ছিল।”
কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বিবৃতিতে জানানো হয়: ‘মুশতাক আহমেদ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে কারাগারের ভেতরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে জেল হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষ-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ ও করোনাভাইরাস মহামারি সম্পর্কে গুজব ছাড়ানো ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ মে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে র্যাব গ্রেফতার করে। সেই সময় থেকে লেখক মুশতাক আহমেদ কারাবন্দী ছিলেন।

বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিন জানায়: ‘কার্টুনিস্ট কিশোরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কারাবন্দী কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভালো না। তার ডায়াবেটিস উচ্চ মাত্রায় থাকায় তিনি এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তার বাম কানে ইনফেকশন, এখন আর বাম কানে শোনেন না তিনি। তার বাম পায়েও ইনফেকশন আছে। বেশি দূর হাঁটতে হলে তাকে অন্যের সাহায্য গ্রহণ করতে হয়। কিশোরের উপর নির্যাতন হয়েছে বলে কিশোর তার পরিবারকে জানিয়েছেন।’
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন: ‘নিপীড়নমূলক আইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক ও কারাবন্দী অবস্থায় মৃত লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর তদন্ত দাবি করছি। পাশাপাশি অসুস্থ কার্টুনিষ্ট আহমেদ কবির কিশোরের নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার জোড় দাবি জানাচ্ছি।’
ফারুখ ফয়সল আরও বলেন: ‘আমাদের পর্যবেক্ষণে দেখছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে মানুষের বাক্ স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যামের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করা হচ্ছে। করোনা মহামারির সময়ে সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবী, ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক এই কালো আইনের যথেচ্ছা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। এই আইনটি দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রক্রিয়ার বড় অংশ হিসাবে আমাদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আর্টিকেল নাইনটিন শুরু থেকেই এই আইনটি পরিবর্তনে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে আসছে। তবে পরিবর্তনের কোন উদ্যোগ এখনও সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। ফলে, আইনটি পরিবর্তনে এখনই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন, বার কাউন্সিলসহ মানবাধিকার সংগঠণগুলোর সম্মিলিত উদোগ নেয়া জরুরি।’
