
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা ছিল খুবই ভয়াবহ। ক্রেতা এবং উন্নয়ন সহযোগিরা ছিল অত্যন্ত কঠোর। অনেক ক্রেতা বিমুখ হওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতাদের অক্লান্ত চেষ্টায় বড় দুর্ঘটনার পরও রপ্তানিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। তবে বর্তমানে কারখানার উন্নত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে তৈরি পোশাক খাতের ‘নিরাপদ কর্মপরিবেশ, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন বক্তারা।
তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক মৌলিক সমস্যা সমাধান উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শ্রমমন্ত্রনালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রমে সরাসরি অর্থসহায়তা দিচ্ছে কানাডা, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাজ্য সরকার।

অনুষ্ঠানে এসব দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং পোশাক খাতের শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর কোন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। তখন ক্রেতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের অবস্থান ছিল অত্যন্ত কঠোর। অনেক ক্রেতা এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল। তখন এ খাতের রপ্তানিতে কিছুটা নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে সময় সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতারা সে সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন দেশে ছোটাছুটি করেছেন। পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফলে এত বড় দুর্ঘটনার পরও রপ্তানিতে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। তবে আর কোন রানা প্লাজা কিংবা ‘মিনি রানা প্লাজা ধস’ ঘটলেও পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখার আর কোন সুযোগ থাকবেনা।
রানা প্লাজা পরবর্তী দিনগুলোর বর্ণনা দিয়ে শ্রমসচিব মিকাইল শিপার বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী, ৫০ জন শ্রমিক থাকলে কোন কারখানায় সেইফটি কমিটি বাধ্যতামূলক। দু:খজনকভাবে এখনো অনেক কারখানা এই কমিটির অস্তিত্ব নেই। এই কমিটি কারখানার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার কথা।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের মাত্র ৭৯ দিনেই শ্রম আইন সংশোধন করা হয়েছে। বিদেশিরা বলেছেন, এর চেয়ে ভালো আইন হওয়া সম্ভব নয়। অথচ আইনটি পুরোপুরি বাতস্তবায়ন হচ্ছেনা। এসময় সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক খাতের জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনপিএ) তৎপরতা এবং এ সংত্রক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন তিনি।
এসময় আগের চেয়ে এখন কারখানার মান অনেক উন্নত বলে জানান এই শ্রম সচিব।
ঢাকায় আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রী নিবাস রেড্ডি বলেন, বাংলাদেশে পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আলোচ্য কর্মসূচিটি বড় ধরনের সহায়তা হবে। এর মাধ্যমে এ দেশে শ্রমখাতে নিরাপত্তা সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।
আলোচ্য কর্মসূচিটি যাতে শ্রমিকদের মধ্যে সাড়া জাগায় এজন্য নাট্য অভিনেতা মোশারফ করিমকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। ১৯ পর্বের রেডিও অনুষ্ঠান, বিজ্ঞাপন, গণসংগীত, এসএমএস ক্যাম্পেইন, টক শো তৈরি করা হচ্ছে। আগামীকাল রাত দশটায় রেডিও অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এক কার্যত্রক্রম শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইপিই) মহাপরিদর্শক শামসুজ্জামান ভূঁইয়া, অ্যামপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সহ-সভাপতি গোলাম মাইনুদ্দিন, ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও অভিনেতা মোশারফ করিম প্রমুখ।