প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানির শুল্কহার প্রায় ৯০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এমনকি ভবিষ্যতে এটিকে পুরোপুরি শুল্কমুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানা তিনি।
রোববার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে অনলাইনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কোভিড পরবর্তী সময়ে ফুড ভ্যালু চেইন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিকে লাভজনক করতে হলে অপ্রচলিত ফসলের চাষও বাড়াতে হবে। সেজন্য কাজুবাদাম, কফিসহ অপ্রচলিত ফসলের চাষ জনপ্রিয় করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। দেশে যাতে কাজুবাদামের প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেজন্য কাঁচা কাজুবাদাম আমদানি শুল্কমুক্ত করতে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছে।
শুধু প্রক্রিয়াজাত নয়, কাজুবাদাম চাষ জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেয় হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বছর কৃষকের মধ্যে কাজুবাদামের ৫০ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কম্বোডিয়া থেকে প্রায় ৫ টন হাইব্রিড কাজুবাদামের বীজ আমদানিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি উদ্যোক্তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ বীজের মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ চারা উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

সরকার পুষ্টিসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিতকরনে অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষি খাতে আধুনিকায়নে খরচ কমাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়াতে হবে। কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজন নিশ্চিকরনের মাধ্যমে কৃষি খাতকে লাভজনক করা সম্ভব। কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে কৃষি ভিত্তিক শিল্পায়ন বাড়ানো দরকার।
মন্ত্রী বলেন, কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম নিশ্চিত করতে হলে ভ্যালু চেইন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
সভায় ডিসিসিআই সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ফুড ভ্যালু চেইনে আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা, মূলধন স্বল্পতা, পণ্য সংরক্ষণের অভাব, দূর্বল অবকাঠামো, পণ্য বাজারজাতকরন এবং প্রক্রিয়াজাতকরনের দক্ষতার অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এসব বাধা নিরসনে আবাদযোগ্য প্রায় ২ দশমিক ২৩ লাখ হেক্টর পতিত জমিতে ফসল চাষের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষায়িত কৃষি পণ্যের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সরবরাহ নিশ্চিতকরন, আর্থিক ও নীতি প্রণোদনা প্রদান, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাতকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিপননে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং পণ্যের বহুমুখীকরনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন বলেন, কৃষি ভিত্তিক ফুড ভ্যালু চেইনে মূলত ৪টি বিষয় জড়িত। যেমন- ইনপুট, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ভোক্তাদের মধ্যে তা বিতরণ নিশ্চিতকরন।
তিনি কম খরচে কৃষি ভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি, উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে সচেতনতা বাড়ানো, আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ‘কন্ট্রাক ফার্মিং’ আরো জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসিং এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক বলেন, কৃষি খাতের সাপ্লাই চেইন সচল রাখা না গেলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম নিশ্চিত করা যাবে না। এক্ষেত্রে মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে।
তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে নির্দিষ্ট পণ্যের দেশিয় চাহিদার বিষয়ে কৃষকদের অবহিত করা হলে, তারা চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পণ্য উৎপাদন করতে পারবে। এছাড়া বিশেষায়িত পণ্য সংরক্ষণে পণ্য উৎপাদিত এলাকায় প্রয়োজনীয় কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন দরকার।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হোটেল-রেস্তোরাগুলোকে গ্রেডিংয়ের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু হোটেল-রেস্তোরায় তা প্রয়োগ করা হয়েছে।
