ভারতে অনুষ্ঠিত আইসিসি টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে কর ছাড় নিয়ে বিবাদের জেরে আইসিসি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক আয়ের অঙ্ক কেটে নেয়ার বার্তা দিয়েছে। এই বিবাদে আইসিসির বিরুদ্ধে লড়তে একটি ব্রিটিশ আইনী সংস্থার দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে ভারতীয় বোর্ড।
আইসিসির চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ভারতে অনুষ্ঠিত সব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ক্ষেত্রে কর ছাড় চাইছে। ২০১৬ বিশ্ব টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের কর ছাড় দেয়ার বিষয় নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারতীয় বোর্ড। ৬ জুলাই বিসিসিআই’র সিওএ’র যে মিটিং হয়, তার বরাত দিয়ে ভারতীয় মিডিয়া জানাচ্ছে, ২০১৬’ ওই ইভেন্টের জন্য কর ছাড় না পেলে আইসিসি বোর্ডের বার্ষিক আয় থেকে কর বাবদ প্রদেয় অর্থ কেটে নেবে।
বিসিসিআই’র আইনজীবীরা বলেছেন, ‘আইসিসিকে কর ছাড় দেয়ার সব রকম চেষ্টা করা হবে। ২০১৬’র আগেও আইসিসির সব ইভেন্টেই কর ছাড় দেয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের কর বাবদ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেটা সম্ভব নয়।’
বিসিসিআই’র ওয়েবসাইটে মিটিংয়ের যে মিনিটস আপলোড করা হয়েছে, তা বলছে, আইসিসি বোর্ডের বার্ষিক লভ্যাংশ থেকে কর বাবদ প্রদেয় অর্থ কেটে নেয়া হবে বলে বার্তা দিয়েছে।’
বিসিসিআই’র আইনজীবীরা আরও বলেছেন, ‘২০১৬’র ইভেন্টের ক্ষেত্রে মিডিয়া রাইটস এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী, আইসিসি ব্রডকাস্টার (স্টার স্পোর্টস)-এর উপার্জনের ১০ শতাংশ আইসিসিকে দেয়ার কথা। এতেই ছাড় দাবি করা হয়েছে। সিওএকে বলা হয়েছে, আইসিসি সেই অর্থ কেটে নিতে চাইছে ভারতীয় বোর্ডকে প্রদেয় অর্থ থেকে।’
এটা জানার পরই সিওএ বোর্ডের আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন, একটি ব্রিটিশ ল’ ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। কারণ, বোর্ড এবং আইসিসির মধ্যে ২০১৬’র বিশ্ব টি-টুয়েন্টি মিটের যে চুক্তি, তা হয়েছিল ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআই’র এক কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ‘আইসিসির কাছ থেকে বোর্ডের বছরে ৪০.৫ কোটি ডলার পাওয়ার কথা। তার ১০ শতাংশ, অর্থাৎ, ৪.০৫ কোটি ডলার কেটে নেয়ার কথা বলা হয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাটিকে আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের কর আইন পরিবর্তন করার ক্ষমতা বোর্ডের নেই। এটা আমরা বারবার আইসিসিকে জানিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, বর্তমান করের পরিকাঠামোর বদল না হলে সামনে দুটি বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হবে। এই দুই ইভেন্ট হল ২০২১ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ সালে একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ।’
কর বিবাদে বিসিসিআই আবার কাঠগড়ায় তুলেছে আইসিসির চেয়ারম্যান ও বিসিসিআই’র সাবেক চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহরকে। বিসিসিআই’র প্রশ্ন, শশাঙ্ক থাকতে আইসিসি এটা কীভাবে করছে?
২০১৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বিসিসিআই চেয়ারম্যান ছিলেন শশাঙ্ক এবং তার উপস্থিতিতেই ওই কর আইন করা হয়। বিসিসিআই’র একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘আইসিসির যে কারো চেয়ে এই বিষয়টা ভালো জানেন মনোহর। কারণ তিনিই তখন বিসিসিআইর চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সব আর্থিক সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছেন।’
বিসিসিআই’র আরেকজন কর্মকর্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘এই বিষয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন মনোহর।’
এই বিবাদ চলতে থাকলে বিসিসিআই’র চেয়ে আইসিসিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে একরকম হুমকিও দেন ওই কর্মকর্তা।