করোনাভাইরাস পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অবস্থাও এক। এ যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার জন্য সাধারণ ছুটি এবং জেলায় জেলায় লকডাউন চলছে। এতে মানবেতর জীবনযাপন করা মানুষদের পাশে রাষ্ট্র এবং প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে আসছেন। তবে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও দুয়েকটা অমানবিক কাণ্ডের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন সন্দেহে গত সোমবার টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গহীন বনে এক নারীকে রাতের অন্ধকারে বনের জঙ্গলে ফেলে রেখে চলে গেছে স্বামী ও তার সন্তান। গভীর রাতে ওই নারীর কান্নার শব্দ শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমাউল হুসনা লিজা জানান, সোমবার রাত দেড়টার দিকে পুলিশ সদস্য ও মেডিক্যাল টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার বাসিন্দা। তার স্বামী-সন্তান গাজীপুরের সালনায় পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তার স্বামী-সন্তান আর স্বজনরা রাতে করোনা সন্দেহে তাকে বনের জঙ্গলে ফেলে রেখে পরের দিন সকালে বাড়ি নিবে বলে আশ্বাস দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে রাতেই ঢাকায় হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
এছাড়া চলতি সপ্তাহে আরও একটি খবর আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনা ঘটেছে নেত্রকোনায়। সেখানকার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠে স্বজনদের অবহেলায় জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, নরোত্তম সরকার নামের একজনকে করোনা সন্দেহে এক স্বজন হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকরা তার উপসর্গ দেখে তিনি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন বলে সন্দেহ করেন। এজন্য চিকিৎসকরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তাকে অক্সিজেন দেন এবং নেবুলাইজড করে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু ওই স্বজন করোনার ভয়ে রোগীকে বাসায় না নিয়ে হাসপাতালের মাঠে রেখে চলে যান। সারাদিন অসুস্থ শরীর নিয়ে মাঠে অবস্থানের পর বিকেলে তিনি মারা যান।
এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এসময় তিনি বলেন: মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হলে অমানুষও হয়। মায়ের একটু সর্দি জ্বর হলে দূরে ফেলে আসে অনেকে। এতটা অমানবিক হওয়ার কিছু নেই। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যা যা করা দরকার করুন। বাংলাদেশের মানুষের তো এমন অমানবিক হওয়ার কথা না।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে আমরা একমত পোষণ করছি। করোনা পরিস্থিতিতে কোনো রোগী বা চিকিৎসকসহ সেবাকর্মীদের সাথে এমন অমানবিক আচরণের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুদক ইতোমধ্যে করোনা যুদ্ধে সেবা দেওয়া ডাক্তারদের সাথে অমানবিক আচরণ করা বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে, করোনাভাইরাস আমাদের শত্রু, এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু এই ভাইরাসে আক্রান্ত বা আক্রান্তদের জরুরি সেবা দেয়ার কাজে নিয়োজিতদের প্রতি কোনোভাবে যেন আমরা অমানবিক না হই।