চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

করোনাভাইরাস: আবার দেখা হবে তো?

বাসার বারান্দায় বসে আজকের সকাল। বেশ নীরবতায় চারপাশ। দখিনা হাওয়ার পরশ।চড়ুইদের কিচিরমিচির আর কবুতরের ওড়াওড়িতে জীবনের সুখটা খুঁজে পাই। আমার সুখ আমার মতন। আবার আরেক বারান্দায় যাই। সেখানে যখন বেলি ফুলের সদ্য ফোঁটা ফুল, হলদে গাঁদা,আম গাছের কচি পাতা, ডালিমের লাল ফুল দেখি, চোখে ভাসে এক স্নিগ্ধতা। উত্তুরে বাতায়নে কী এক অপরূপ শান্তি পাই। মনে হয় বেহেশতের এক আরেক রূপ।বাঁচার স্বাদ যেন বেড়ে যায়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, এখন পর্যন্ত ভাল আছি, সুস্হ আছি, নিরাপদে আছি, এতো তোমারই অসীম দয়ার ফল। চিত্তভরে কৃতজ্ঞতা জানাই তোমায় প্রভু।

দুই ছেলে আমার। বড়টি সপ্তম শ্রেণিতে আর ছোটটি চতুর্থ শ্রেণিতে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে পড়ে। স্কুল বন্ধ, তারপরেও ওদের পেছনে কিভাবে পুরোটা দিন কেটে যাচ্ছে,বুঝতেই যেন পারছিনা। সকালে উঠে নামাজ পড়েই,জানালা দরজা খুলে দেই। আলোবাতাসে ভরে যায় আমার নীড়। এরপর বারান্দায় যাই। ফুল ও ফলের গাছে পানি দেই। ওদের সবুজাভ আমাকে সজীবতা দেয়।বড় ছেলে একদিন বলল মা আজকের পর থেকে গাছগুলোতে আমিই পানি দেব। নতুন দায়িত্ববোধের সূচনা দেখে খুশী হলাম।

Bkash July

এভাবেই ওরা ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠুক। প্রতিদিন সকালে রুটিন করে বাচ্চারা দুএক ঘন্টা লেখাপড়া করছে। এর মাঝে সংসদ টেলিভিশন থেকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে । বাচ্চারা এটা অনুসরণ করছে,বাড়ির কাজগুলো তৈরি করে রাখছে। তবে বিদ্যুত গোলযোগের জন্য দুএকটা ক্লাস মিস করেছে বলে মন খারাপও করেছে। ডিজিটাল শিক্ষাকার্যক্রমে এ এক নতুন মাত্রা।

সকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছি। বড় ছেলে একদিন বিকেলে বলল মা, তুমি বসে আছ? আসরের নামাযের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে, তুমি নামাজ পড়বেনা? একথা শোনার পর একজন মার মন তৃপ্তিতে ভরে যেতেই পারে। দোয়া করি ওদের মাঝে আজীবন এ একাগ্রতা বজায় থাকে। নিয়মিতই আমরা করোনা আপডেট টিভিতে শুনছি, টকশো দেখছি। কখনও অস্থির লাগছে, কিন্তু দুশ্চিন্তা করছিনা। নিজেকে ইতিবাচক রাখছি,পরিবারকেও সাহস দিচ্ছি।

Reneta June

কখনও বাচ্চারা অস্থির হয়ে যাচ্ছে, বলছে মা চলো তোমার পিপিই পড়ে একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তখন ওদের সাহস দিচ্ছি এই বলে, তোমরাও বাসায় থেকে যুদ্ধ করছো। ওরা তখন বোঝে। আমার যেদিন ডিউটি থাকে,সেদিন বাচ্চাদের যে কী একটা শঙ্কা কাজ করে? মা তুমি যেওনা, না গেলে হয়না। ওদের শঙ্কায় নিজেকে কিছুটা বিচলিত মনে হলেও বুঝতে দেইনা। বলি বাবা আমিতো চিকিৎসক। আগে সেবা, মানবতা। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও যুদ্ধ করতে হবে, করোনাকে হারাতেই হবে। পিপিই পড়েই অফিসে যাচ্ছি, আমি নিজ দায়িত্বে কিছু পিপিই যোগাড় করে নিজের জন্য রেখেছি। সহকর্মীদের জন্য নিজ বিভাগে দিয়েছি।

বিএসএমএমইউতে আমার ল্যাবে নানা ধরনের নমুনা আসে। যেহেতু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আছে,তাই যেকোনো মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হতে পারি। অফিসে সহকর্মীদের সাহস দিচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে সহকর্মীদের সাথে কাজ করছি। কাজশেষে আবার দেখা হবে বলে একে অন্যকে বিদায় জানিয়ে চলে আসি।

মনে প্রশ্ন জাগে, আবার দেখা হবে তো? আমার ছাত্রছাত্রীদের খুব মিস করছি, কারণ তাদেরতো ক্লাশ বন্ধ। তবে যোগাযোগ রয়েছে ফেসবুক, মেসেন্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে। বিশেষ করে এমডি থিসিস পার্টের থিসিসের কাজ অনলাইনে চলছে। এটা মেডিকেল পোস্টগ্রাজুয়েট অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রমের একটা অনন্য দৃষ্টান্ত। এর মাঝে কোভিড-১৯ এ মেডিকেল ল্যাবরেটরিতে করণীয় বিষয়ক একটি আর্টিকেল লেখা শেষ করলাম এবং সেটা চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত হলো। নিজের পেশাভিত্তিক কিছু লিখতে পেরে ভাল লাগছে এবং আশা করি তাদের সুরক্ষায় কাজে লাগবে ।

বাবা-মা,ভাই- ভাবী থাকেন দিনাজপুরে কাহারোল উপজেলার ভাঁতগা গ্রামে। জায়গাটা হলো দর্শনীয় স্থান কান্তজীর মন্দিরের পরের স্টেশন। বাবা সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আর ভাই ডিপ্লোমা প্রকৌশলী। এ দুঃসময়ে প্রতিদিন সময় করে ম্যাসেন্জারে ভিডিও চ্যাটিং এর মাধ্যমে ওদের সাথে দেখাও হয়, কথাও হয়। মনটা ভালো হয়ে যায়, বাচ্চারাও আনন্দ পায়।

মাঝে মাঝে বন্ধুদের ফোন আসে। কখনওবা নিজেরা কেমন আছি, মতবিনিময় করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই করোনা ল্যাবের তথ্য দিয়ে, বিভিন্ন জায়গায় লিয়াজো করে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। এভাবে করোনা দুর্যোগে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে ভারমুক্ত লাগছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলো কিভাবে যে তাদের দিনগুলো পার করছে, তা আমাকে ভাবাচ্ছে। সরকার যদিও তাদের ত্রাণ বিতরণ করছে। আমি চিন্তা করছি তাদের কিভাবে সাহায্য করা যায়?

বাসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্টেশনারি, সাবান, সেনিটাইজার ইত্যাদি যতটুকু দরকার ততটুকুই কিনে রেখেছি , অনেকের মত মজুদ করিনি । যখন যা লাগছে তা বাজার করছি, তিন চারদিন পরপর। ড্রাইভারকে মাস্ক, গ্লাভস, গগলস কিনে দিয়েছি এবং এগুলোর ব্যবহার শিখিয়ে দিয়েছি। সামাজিক দূরত্ব মেনে দায়িত্বে রেখেছি, কারণ গণপরিবহন বন্ধ। আমাকে হাসপাতালে যেতে হয় । বাসার নিচে ঢোকার সময় হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি, বালতি, পানির মগ, সাবান, সেনিটাইজার দিয়েছি। সকলে বাইরে বের হওয়া ও ভেতরে ঢোকার সময়ে হাত ধুচ্ছে, মাস্ক পড়ছে। এভাবেই চলছে আমাদের কোভিড-১৯ সময়ের দিনরাত্রি এবং চলবে। এক অদৃশ্য করোনা ভাইরাস। এক চরম শত্রু। সভ্যতার শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে।সাহসের সাথে মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি এবং করব। বলতে চাই-

করোনা ভাইরাসের
ছোবল থেকে রক্ষা করো মোদের প্রভু,
কৃতজ্ঞতায় তোমায় ভুলবোনা কভু।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View