বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে জাতীয় বাজেট যথাসময়ে পেশ করা যায় কিনা সেই শঙ্কা যখন দেখা দিয়েছিল, তখন ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এমন পরিস্থিতিতেও অর্থমন্ত্রী সুদক্ষভাবে বাজেট উপস্থাপন করতে পারায় আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই।
জাতীয় বাজেটকে সরকারের পক্ষ থেকে মানুষের জীবন-জীবিকা ও প্রত্যাশার অগ্রাধিকার বলে জানানো হয়েছে। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেছেন: এই বাজেট মানুষ বাঁচানোর বাজেট। সবসময় আয়ের চিন্তা করা হলেও এবার আমরা আগে খরচ করছি, আয়ের চিন্তা পরে করবো। মানুষের জীবন জীবিকা আমাদের কাছে অগ্রাধিকার।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন: অনেকে এটাকে উচ্চাভিলাষী মনে করতে পারেন। তবে আওয়ামী লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। এই প্রত্যাশা পূরণে যত ঝুঁকি নিতে হয় শেখ হাসিনা তা নেবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন: অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার কাঙ্খিত ভীত রচনাই এবারের বাজেটের লক্ষ্য। এবারের বাজেট ভিন্ন বাস্তবতায়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রণীত। এ বাজেট করোনার বিদ্যমান সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দেওয়ার বাস্তবসম্মত প্রত্যাশার দলিল। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে; সংকটকালীন ও সংকট পরবর্তী সম্ভাব্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার গতিপথ নির্ণয়ের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রণীত হয়েছে এবারের বাজেট। যা জীবন-জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়োচিত সাহসী চিন্তার ফসল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ না করে উপায় নেই। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতির এই সময়ে এটাই এখন নির্মম বাস্তবতা। মহামারি করোনাভাইরাস এর (কোভিড-১৯) কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার ও অতীতের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েই এবারের বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় তা সময়ই বলে দেবে। এমন প্রেক্ষাপট থেকে বিগত দিনের মতো অর্থনীতি আবারও উন্নয়নের মহাসড়কে উন্নীত হবে বলে আমাদের আশাবাদ।
এমন আশাবাদের মধ্যেও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আমাদেরকে কিছু চরম বাস্তবতার কথা শুনিয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে শুক্রবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সিপিডি জানিয়েছে: বিদ্যামান করোনাভাইরাস সমস্যা মোকাবেলায় বাজেটে যে ধরনের কাঠামো থাকা দরকার ছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। কোভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক, মানবিক এবং অর্থনীতি খাতে যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, বাজেটে তা মোকাবেলায় সে ধরনের কোনো সামাজিক কাঠামো নেই।
এছাড়া সিপিডি জানিয়েছে: চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন গঠন, দুদককে শক্তিশালী করা, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, প্রবাসী ও সরকারী কর্মচারী এবং শস্য ও পবাদিপশু বীমার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আগামী বাজেটেও এইসব বিষয়ে সংস্কারের কোনো জোরালো বক্তব্য নেই।
সিপিডি’র মতে: বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া অনৈতিক ও অলাভজনক। এই সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। তাদের প্রতি সুবিবেচিত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। কারণ যারা সৎ করদাতা তারা প্রচলিত হারে কর দিয়ে আসছেন। কিন্তু যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন বছরের পর বছর, তারা এই সুযোগে শুধুমাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে টাকাটা সাদা করে ফেলতে পারছেন। এই ধরনের সুবিধা দিয়ে আসলে কোনো লাভ হয় না। এটার জন্য আসলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
সিপিডি’র এসব পর্যালোচনা বিবেচনায় নিয়ে পরিপূর্ণ সংশোধিত বাজেট পাস হবে বলে আমরা আশা করি। এছাড়াও বাজেট পাসের আগে স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ গ্রহণ করতে করতে হবে। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ থাকলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলা করে আবারও আমরা অর্থনৈতিক উত্তরণের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আমরা আশা করি। এজন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।