চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কন্যাদের শেখাতে গিয়ে তিনি নিজেই খেলোয়াড়

প্রথম দর্শনে মনে হবে তিনি নিখাদ একজন দর্শক। খানিক সময় নিয়ে আরেকটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যাবে তিনি এমন একজন দর্শক-অভিভাবক, যার সন্তানরা হয়ত খেলছেন কোর্টে। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কিছু বাক্য বিনিময় করলে ধারণার সঙ্গে যোগ হবে বিস্ময়। ৪০ ঊর্ধ্ব শাহিনুর আকতার নামের ওই নারীর পরিচয় তিনি নিজেই একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। একটু আলাপ এগোতেই হাসিমুখে জানালেন, স্বামী ও দুই কন্যার সংসার সামলে খেলে চলেছেন বাস্কেটবলটা!

আই-ক্রিয়েশনের পৃষ্ঠপোষকতায় শনিবার শেষ হয়েছে দুদিনব্যাপী ‘ফায়ারবল থ্রি ইনটু থ্রি বাস্কেটবল টুর্নামেন্ট’। ছেলেদের ১৮ দলের সঙ্গে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল মেয়েদের ১০টি দলও। অংশগ্রহণকারী নারী খেলোয়াড়দের কারও বয়সই ত্রিশের বেশি নয়। ব্যতিক্রম কেবল শাহিনুরই।

স্বামী-সংসার সামলে কীভাবে খেলোয়াড় হয়ে ওঠা? শাহিনুর চ্যানেল আই অনলাইনকে হাসিমুখেই শোনালেন গল্পটা। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা জয়িতা ও তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ঈপ্সিতাকে রোজই নিয়ে যান তায়কোয়ান্দো শেখাতে। মেয়েদের সেখানে রেখে একফাঁকে সেরে ফেলতেন দৈনিক প্রাতঃভ্রমণের কাজটাও। তখন প্রতিদিনই চোখে পড়তো সুলতানা কামাল মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অল্পবয়সী মেয়েদের বাস্কেটবল অনুশীলনের দৃশ্য।

নিজের ফিটনেস ভালো রাখার তাগিদে শাহিনসহ আরও চার নারী অভিভাবক একদিন সাহস করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বাস্কেটবল খেলা শিখবেন। প্রশিক্ষণদাতা কোচ প্রথমে অবাক হলেও ভর্তি করে নেন। সেই থেকে শাহিন বাস্কেটবলের সঙ্গেই আছেন। বাকি চারজন ব্যস্ততার কারণে ঝরে পড়লেও তিনি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। সেই চেষ্টায় খেলে ফেললেন থ্রি ইনটু থ্রি বাস্কেটবল টুর্নামেন্টেও।

শাহিনুর আকতার

এই বয়সে বাস্কেটবলের মতো ঘামঝরানো খেলা, ক্লান্তি জাগে না? এমন প্রশ্নে আরও একগাল হাসিমাখা উত্তর, জানালেন- সংসারের জন্য ঢাকাতে থাকতে হলেও আদতে তার বেড়ে ওঠা মানিকগঞ্জের হরিরামপুর গ্রামে। সেখানের পরিচ্ছন্ন হাওয়া বাতাসে নানা ধরনের খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন। তাই পরিশ্রম করার মতো ফিটনেস আগে থেকেই ছিল। সঙ্গে ব্যাংকার স্বামী ও দুই কন্যার অনুপ্রেরণাই তাকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে।

তিনি না হয় পরিবার থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন, কিন্তু বাংলাদেশের অন্য নারীরা কী তার মতো সৌভাগ্যবান? শাহিনুর এক্ষেত্রে বেশ হতাশ। পড়াশোনা, চাকুরী কিংবা সংসারের বাইরে যে আরেকটি জগত আছে; সেদিকটায় নারীদের প্রতি নজর দেয়ার আহ্বান তার। বিশেষ করে ত্রিশ পেরোনোর পর মহিলাদের মুটিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভোগাসহ নানাবিধ সমস্যার উত্তরণে খেলাধুলার কোনো বিকল্প দেখেন না তিনি।

‘মেয়েদের সচেতনতার অভাবটা আমাকে বেশ কষ্ট দেয়। আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন না। আজকাল খুব কমবয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তাদের নানাবিধ শারীরিক জটিলতা। কেনো? কারণ তারা অন্য সবকিছুতে আছে কিন্তু খেলাধুলাতে নাই। পরিশ্রমমূলক খেলাধুলাতে নাই। বাস্কেটবলের মতো খেলা তাদের জন্য ভালো একটা সমাধান হতে পারে। আমি চাই, আমাদের মেয়েরা আরও বেশি বেশি খেলাধুলাতে আসুক।’