সিয়াম সাধনার মাসে যখন সাধারণ মানুষের প্রয়োজন একটু বাড়তি স্বস্তি, তখন সেখানে ভোগান্তি হয়ে দেখা দিয়েছে গ্যাসের তীব্র সংকট। গ্যাস না থাকায় ইফতার ও সেহরি তৈরি করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকে। চ্যানেল আই’র প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এমনকি রোজার শুরু থেকেই গ্যাস সংকটে একরকম যুদ্ধ করছেন রাজধানীর মানুষ।’
একপ্রকার যুদ্ধ করে ক্ষুধার জ্বালা কেউ কেউ মেটাতে পারলেও অনেক মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছেন। এমনও অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা সারাদিন রোজা রাখার পর সময়মতো খাবার খেতে পারছেন না। কারণ, গ্যাস সংকটে তাদের বাসায় উনুন জ্বলে না।
দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও গ্রাহকের এমন ভোগান্তিতে কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকা অত্যন্ত অমানবিক। গ্যাস বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানি তিতাস অবশ্য বলছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাস কম থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে অবশ্য এগুলো অজুহাত মনে হয়।
এছাড়া গ্যাস সরবরাহ ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সারা বছরই ভুতুড়ে বিলসহ নানা ধরনের গ্রাহক ভোগান্তির অভিযোগ থাকে। গ্রাহক সেবার মানোন্নয়নে সেসব অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই আমলে নেওয়া হয় না বলে গ্রাহকরা বলে থাকেন।
সংকট নিরসনে অনেক আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে আবাসিক গ্রাহকদের এলপিজি ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এ কারণে বেশ কয়েকবার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আবাসিক গ্রাহকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। উৎপাদনশীল খাতে গ্যাস ব্যবহারের যৌক্তিকতা থাকলেও আবাসিকে মোট উৎপাদনের মাত্র ৮ শতাংশ গ্যাস ব্যবহার করা হয়। আবাসিক গ্রাহকদের জন্য যে উৎপাদনশীল খাতে গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না তাও নয়।
সরকারের এত চেষ্টার পরেও তাহলে আবাসিক গ্রাহকদের এলপিজি বা সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহারের দিকে আনা যাচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর আদৌ কি কেউ খুঁজেছে? অনেকাংশে দেখা যায়, সিলিন্ডার বিস্ফারণের ভয়ে সাধারণ মানুষ এলপিজি ব্যবহার করে না। এছাড়া অতিরিক্ত দাম এবং অব্যবস্থাপনার বিষয়ও রয়েছে। এসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে সমাধান করলে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হতে পারে।
গ্যাস সংকট নিরসনে আমদানী করা এলএনজি কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে পৌঁছালেও গত এক মাসে তা জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা যায়নি, যদিও ১৫ দিনের মধ্যে এই গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করার কথা ছিল। আবার নিজস্ব গ্যাস দিয়ে সংকট মেটানোর জন্য যতটা অনুসন্ধান এবং খনন দরকার তার সিকে ভাগও করা হয়নি।
নির্বাচনের বছরে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির খবর এবং রমজানে গ্যাস না পেয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি সরকারের জন্য নিশ্চয়ই ভালো খবর নয়। আমরা আশা করি, জনভোগান্তি নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে শিগগিরই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।