এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। দেশের সবগুলো বোর্ড শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এ বছরের পাসের হার ৮২.২০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। সেখানেই বিস্তারিত ফলাফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
ফল ঘোষণায় শিক্ষামন্ত্রী জানান: এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয়া মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল মোট ২৮ হাজার ৬৭৩টি। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ২৮ হাজার ৫৫৮টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১১৫টি।
মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮২টি। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪১৫টি। বেড়েছে ৬৭টি।
প্রকাশিত ফলাফলে এ বছর শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মোট ২ হাজার ৫৮৩টি। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ১ হাজার ৫৭৪টি। বেড়েছে ১ হাজার ৯টি। অন্যদিকে শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার ১০৭টি, যা গতবার ছিল ১০৯টি।
অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ জন, যা গত বছর ছিল ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২৪১ জন।
অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মাঝে পাস করেছে মোট ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন। এবার পাসের সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬১ জন।
১০ বোর্ডে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪.৪৩ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭.৭৭ শতাংশ।
উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। জিপিএ-৫ এর হার এবার ৪.৯৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৫.৪৬ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন।
৮ সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের তথ্য
অংশগ্রহণকারী মোট পরীক্ষার্থী ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫২ জন, যা গত বছর ছিল ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩ জন। বেড়েছে ৭০ হাজার ২২৯ জন।
পাস করেছে ১৪ লাখ ৩ হাজার ১৫৭ জন। গত বছর পাস করেছিল ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০৫ জন। এবার বেড়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৫২ জন। পাসের হার ৮২.৮০ শতাংশ। গত বছর হার ছিল ৭৯.৪০ শতাংশ। এবার বেড়েছে ৩.৪০ শতাংশ।
৮ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৯৪ হাজার ৫৫৬ জন। শতকরা হার ৫.৫৮। গত বছর মোট জিপিএ-৫ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ জন অর্থাৎ ৬.৩৩ শতাংশ।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তথ্য
এবার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল মোট ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ জন, যা গত বছর ছিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৭ জন। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে এবার ১৯ হাজার ৮৬৩ জন।
পাস করেছে মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭১০ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৩৮২ জন। বেড়েছে। ৫১ হাজার ৩২৮ জন।
পাশের হার ৮৩.০৩ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭০.৮৯ শতাংশ। পাশের হার বেড়েছে। ১২.১৪ শতাংশ।
মোট পাসের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ জন। যা শতকরা হারে ২.০৫। গত বছর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৭১ জন। হার ছিল ১.১৭।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে মোট অংশ নেয়া পরীক্ষার্থী ১ লাথ ২৬ হাজার ৩৮৩ জন, যা গত বছর ছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন। এবার বেড়েছে ১১ হাজার ১৪৯ জন।
মোট পাস করেছে ৯১ হাজার ২৯৮ জন। গত বছর পাসের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৯১৭ জন। এবার বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮১ জন।
পাসের হার শতকরা ৭২.২৪ জন। গত বছর হার ছিল ৭১.৯৬ শতাংশ। বেড়েছে ০.২৮ শতাংশ।
২০১৯ সালের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৪ হাজার ৭৫১ জন। জিপিএ-৫ এর হার ৩.৭৬ শতাংশ। গত বছর মোট জিপিএ-৫ ছিল ৪ হাজার ৪১৩ জন। হার ছিল ৩.৮৩ শতাংশ।
প্রতি বছর প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ ফল তুলে দিতেন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় তার অনুমতিক্রমে এ ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরের কারণে অনুপস্থিত থাকায় তার পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লেখা বার্তা পড়ে শোনান শিক্ষামন্ত্রী। বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি উত্তীর্ণ সব পরীক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বার্তা পড়ে শোনানোর পর টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বলেন, লন্ডনে থাকার ফলে সঙ্গত কারণে তিনি ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না বলে তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
তবে উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানিয়ে অকৃতকার্যদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি অনেক সময় অনেক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে কারও কারও পরীক্ষা খারাপ হয়। কিন্তু সেখানে থেমে থাকলে চলবে না। আমি চাই তোমরা আরও বেশি পড়াশোনা করে পরেরবার পাস করবে। আমি চাই না কেউ ফেল থাকুক।’
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৯ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বরাবরের মতো এবারও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে গিয়ে ফল জানা যাবে। ওয়েবসাইটের ঠিকানা: http://www.educationboardresults.gov.bd
এছাড়া যে কোনো মোবাইল থেকে এসএমএস করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল জানা যাবে। সেজন্য মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে SSC<space> BOARD<space>ROLL<space>YEAR ( যেমন: SSC DHA 123456 2019 ) লিখে 16222 নম্বরে পাঠিয়ে দিলেই ফিরতি এসএমএসে জানা যাবে পরীক্ষার ফলাফল।
আর দাখিল পরীক্ষার্থীরা শুধুমাত্র SSC এর পরিবর্তে DAKHIL লিখে অন্যান্য তথ্য দিয়ে একই নম্বরে পাঠালে ফল জানা যাবে।
দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়।
গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা শেষের ৬০ দিনের মধ্যে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। আগামী ৯ মে পরীক্ষা শেষের ৬০তম দিন পূর্ণ হবে। এবার তার তিন দিন আগেই ফল প্রকাশ করা হলো।