প্রায় ২৫ বছর যাবৎ চলচ্চিত্রাঙ্গনে দাপিয়ে অভিনয় করছেন মিশা সওদাগর। পর্দার ‘মন্দ মানুষ’ হিসেবে এই অভিনেতার আলাদা কদর। রাজীব, হুমায়ূন ফরীদি, ডিপজলদের মতো খল নায়কদের ছাপিয়ে মিশা আজও সমানতালে বিরামহীন ছুটে চলেছেন।
এই অভিনেতা জানালেন, তার ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছের কথা। এফডিসির শিল্পী সমিতির ভোটের আমেজের মধ্যে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপে মিশা সওদাগর জানালেন, তার এই সুপ্ত ইচ্ছের কথা।
তিনি বলেন, সিনেমা বানাতে গেলে গল্পের সামঞ্জস্য রাখা খুব প্রয়োজন। আমার ভয় হয় যদি গল্পটাকে ঠিকভাবে মিলাতে না পারি! মাথায় গল্পের কনসেপ্ট আছে। সুর্বণা মুস্তফা আপা হবে বাড়ির বোন। সিনেমার নাম ‘দিদি’ বা এই টাইপের কিছু হবে। এর বাইরে গার্মেন্টসের মেয়ে বা সমাজে নারীরা যেভাবে প্রতিদিন অ্যাবিউস হচ্ছে এসব কনসেপ্ট নিয়ে সিনেমা করা যায়।
মিশা সওদাগরের কথা, আমার পরিচালক হওয়ার খুব ইচ্ছে। কিন্তু এই কাজটি করতে আমি ভীষণ ভয় পাই। পরিচালনা করা এমন একটি পেশা যেখানে পরিচালককে সাইন্স, আর্টস এবং কমার্স তিনটাই জানতে হয়।

উদাহরণ টেনে মিশা সওদাগর বলেন, চরিত্র যদি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয় তবে পরিচালককে চরিত্র সম্পর্কে ধারণা রাখতে তাকে সাইন্সের এ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আবার চরিত্র যদি বড় ব্যবসায়ীর বা ফিন্যান্স সম্পর্কিত হয় তবে এজন্য সঠিক ধারণা থাকতে হবে। তাই অনেক বেশি পড়াশোনা এবং গবেষণা ছাড়া কেউ ভালো পরিচালক হতে পারে না।
মিশা বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জব হচ্ছে ওয়ার্ল্ড পলিটিশিয়ানদের। বঙ্গবন্ধু, মাও সেতুং, মতাত্মা গান্ধী তাদের সিদ্ধান্তে একেকটি দেশ স্বাধীন হল। আমার কাছে মনে হয় এসবের পরে সবচেয়ে কঠিন জব হচ্ছে সিনেমা বানানো। পরিচালকদের ক্যারিশমার কারণে আয়ুষ্মান খুরানাদের মতো অভিনেতাদের সুদিন এসেছে। পরিচালকরাই মানুষের টেস্ট বদলে দিয়েছেন।
তবে সিনেমা হলের জন্য সিনেমা বানাতে হলে অবশ্যই ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস এবং ডিসির দর্শকদের কাছে ভালো লাগাতে হবে উল্লেখ করে মিশা বলেন, এই তিন শ্রেণির দর্শকদের সমন্বয় করাতে পারলেই সেই সিনেমা হিট করবে। সুপারহিট সিনেমা সেটাই যেটা শহরের মেয়র পছন্দ করবে এবং মেথরও পছন্দ করবে। নির্দিষ্ট একটি শ্রেণির মানুষের কাছে ভালো লাগলেই সেই সিনেমা সুপারহিট হবে না।
যোগ করে মিশা সওদাগর বলেন, সিনেমার মুক্তির সময় এখন বেশি অনলাইনেই মাতামাতি হয়। কিন্তু ফেসবুকে সিনেমা মুক্তি দিয়ে হিট করাতে পারবে কেউ? কেউ পারবে না। সিনেমা নিয়ে অনলাইনে আলোচনা অবশ্যই ভালো তবে হিট হতে সিনেমা হল লাগবে।
তিনি বলেন, গবেষণা করে কাজ করবে এমন পরিচালক আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে থাকা উচিত ছিল। এখনও পাঁচটা গান পাঁচটা ফাইট দিয়ে সিনেমা হচ্ছে। যেহেতু এখন মানুষের হাতে হাতে সিনেমা হল তাই গবেষণা করে কাজ করতে হবে। বাণিজ্যিক সিনেমাও অন্যভাবে প্রেজেন্ট করা যায় সেটা অমিতাভ রেজা (আয়নাবাজি), দীপঙ্কর দীপনের (ঢাকা অ্যাটাক) মতো ডিরেক্টরা করে দেখিয়েছেন।
”মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার কয়েকটি কাজের মাধ্যমে একটি শ্রেণির দর্শকদের ধরেছেন। এটাকে সাধুবাদ জানাই।”
সিনেমা হলের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দেখে অভ্যস্ত হচ্ছে দর্শক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিনেমা ও সিরিজে বুঁদ হওয়া দর্শকদের সিনেমা হলে ফেরানো কঠিন বলে মনে করেন মিশা সওদাগর। এ অভিনেতা জানালেন, তার নিজেরও ওটিটি-তে কাজের ইচ্ছে রয়েছে।
বললেন, সঞ্জয় সমদ্দারের ‘শিকল’ ওয়েব কনটেন্টে কাজের কথা ছিল। ডেট মিলাতে পারিনি বলে শতাব্দী ওয়াদুদ করেছে। শিগগির নুসরাত ফারিয়া আমি ইয়াশ রোহানকে নিয়ে বানানো নতুন একটি ওয়েব কনটেন্টে কাজ করবো।
মিশা সওদাগর বলেন, আশফাক নিপুণ, মাবরুর রশিদ বান্নাহ, মোস্তফা কামাল রাজ, রেদওয়ান রনির মতো পরিচালকরা আমাকে ডাকলে অবশ্যই কাজ করবো। তারা প্রত্যেকেই ছোটপর্দার জন্য পরীক্ষিত ডিরেক্টর। তারা সিনেমা কেমন বানাবে জানি না তবে বিশ্বাস আছে ভালো করবে। নিপুণের ‘মহানগর’ সিরিজটি যদি সিনেমা হলে চালায় সেখানেও ভালো চলবে।
মিশা সওদাগরের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘এতো এতো চরিত্র করলেন! নিজের কোন কোন সিনেমা এবং চরিত্রগুলো আলাদা করবেন’?
একবাক্যে মিশা বলেন, অনন্য মামুনের ‘ভালোবাসা গল্প’ নামে একটি সিনেমায় আইনজীবীর চরিত্র করেছিলাম। সেটা আমার ক্যারিয়ারে অন্যতন সেরা অভিনয় ছিল। এছাড়া শিহাব শাহীনের ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমার চরিত্রটা শুটিংয়ের পরেও আমার মধ্যে ভর করেছিল। আমার আরেকটা অন্যতম ভালো লাগা এবং আশার সিনেমা ছিল গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’।