চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এখনও শনিবারে চিকিৎসা সেবা দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

শনিবার ভুটানের জিগমে ডরজি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালে নিজহাতে এক রোগীর ইউরিনারি ব্লাডারের অপারেশন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

সম্প্রতি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ভুটান। সেই সুখী দেশের প্রধানমন্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডে খুশি সকলেই। তার হাতে চিকিৎসা পেয়ে খুশি রোগীরাও। কারণ তাদের কাছে তিনিই সেরা ডাক্তার।

লোটে শেরিং বলেন, এমন কিছু করলে আমার মানসিক চাপ দূর হয়।

২০০৮ সালে রাজতন্ত্র ভাঙার পরে গতবছর তৃতীয়বারের মতো হওয়া গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সাড়ে সাত লাখ মানুষের বাসভূমিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন লোটে শেরিং।

তিনি যোগ করেন, কেউ কেউ গলফ খেলে, কেউ তীরবিদ্যা চর্চা করে, আর আমি অপারেশন করি। এটাই আমার উইকেন্ড।

তবে মলিন অ্যাপ্রোন আর জুতা পরে হাসপাতালের ব্যস্ত করিডরে হাঁটার সময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকেনি কেউই। নার্স অ্যাটেন্ডেন্টরা সবাই যার যার নিয়মিত কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বৌদ্ধদের এই রাজত্ব সুখী দেশের সীমাও স্পর্শ করছে। তাদের জাতীয় সুখের একটি ভিত্তি হলো দেশটির আবহাওয়া। ভুটান পুরোপুরি কার্বন নেগেটিভ এবং তাদের সংবিধানেই অন্তত ৬০ শতাংশ বনভূমি রাখার কথা বলা হয়েছে।

এমনকি দেশটির রাজধানী থিম্পুতে কোনো ট্রাফিক লাইট নেই। আর তামাকও নিষিদ্ধ। বজ্র ড্রাগনের এই দেশে তারপরও তাদের নিজস্ব কিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যে দুর্নীতি, গ্রামীণ দারিদ্র, বেকারত্ব আর সন্ত্রাসীদের প্রভাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা লোটে শেরিং তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০১৩ সালে। কিন্তু সেই বছর তার দল কোনো অবস্থান তৈরিতে ব্যর্থ হয়। পরে রাজা জিগমে কেসার নামগেল ওয়াংচুক তাকে পরামর্শ দেন ডাক্তারদের একটি দল পরিচালনা করতে যারা গ্রামীণ জনপদে গিয়ে গরীবদের বিনামূল্যে সেবা দিবে।

এখনও শনিবার সকালে তার কাছে রেফার করা রোগীদের সেবা দেন তিনি আর বৃহস্পতিবার সকালে ট্রেইনি ও ডাক্তারদের পরামর্শ প্রদান করেন। রোববার পুরোটা সময় দেন পরিবারকে।

প্রধানমন্ত্রীর অফিসেও তার চেয়ারের পেছনে একটি অ্যাপ্রন ঝোলানো থাকে। ভুটানে চিকিৎসার জন্য সরাসরি কোনো টাকা প্রদান করতে হয় না। তারপরও লোটে শেরিং মনে করেন, আরো অনেক কিছু করার আছে।

ভুটানে গড় আয়ু বেশি, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে এবং ছোঁয়াচে অনেক রোগও কমেছে। কিন্তু অ্যালকোহল আসক্তি এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ বেড়েই চলেছে। এসবের উপরই এখন নজর দিতে হবে বলে মনে করেন লোটে শেরিং।

তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে রোগীদের অবস্থা দেখি এবং তাদের চিকিৎসা করি। আর সরকারে থেকে আমি স্বাস্থ্যনীতি দেখি আর সেটা কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সেটা ভাবি। মৃত্যু পর্যন্ত এভাবে কাজ করে যেতে চাই। এখানে না আসতে পারলেই খুব কষ্ট পাবো।