দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধিকে স্থায়ী রূপ দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। বুধবার জাতীয় সংসদে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন: জাতীয় ঐক্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না।
নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
জাতীয় সংসদের প্রথম এবং নতুন বছরের শুরুর অধিবেশনে বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেয়ার রেওয়াজ। অধিবেশনজুড়ে তার ভাষণের ওপর সংসদ সদস্যদের আলোচনা শেষে রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটিই রীতি। সেই ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ।
স্পিকারের অনুরোধের পর রাষ্ট্রপতি তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পড়ার শুরুতেই চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। একইসঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি ভোটাধিকার প্রয়োগ করায় সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জনে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সংসদকে কার্যকর করতে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগও আশা করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন: দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামীদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকান্ড মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
একাত্তরের শহীদদের কাছে অপরিশোধ্য ঋণ আছে উল্লেখ করে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় সামিল হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
জনগণের রায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশে’র প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে সহযোগিতার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সে পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্য-আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো।