চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

উত্তাল কেন শ্রীলঙ্কা?

KSRM

সাম্প্রতিক সময়ে বিক্ষোভে উত্তাল শ্রীলঙ্কা। লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করছেন।

১৯৪৮ সালে ব্রিশিট শাসন থেকে মুক্তি লাভের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। খাদ্য সঙ্কট, মূল্যস্ফীতি এবং বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।  দেশটির এসব সঙ্কটের জন্য সরকারকেই দায়ী করা হচ্ছে।

Bkash July

শ্রীলঙ্কা কেন আর্থিক সঙ্কটে পড়ল?
শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে এসেছে পড়েছে। এটাকেই অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সঙ্কট বলা হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা না থাকার অর্থ হলো প্রধান খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানী আমদানীর জন্য যথেষ্ট অর্থ নেই। ফলে খাদ্য সঙ্কট এবং মূল্যস্ফীতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সরকার এ পরিস্থিতির জন্য করোনা মহামারীকে দায়ী করছে। সরকার বলছে মহামারীর কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধ্বস নেমেছে। তাছাড়া তিন বছর আগে দেশটিতে ভয়াবহ বোমা হামলার কারণেও পর্যটক কমে গেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছে, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই বর্তমান সঙ্কটের জন্য দায়ী।

Reneta June

শ্রীলঙ্কায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় হয়েছে আকাশচুম্বী। খাদ্যপণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩০%।  এর অনেক কারণ থাকলেও অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ৩০ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ। যে গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ২০০৯ সালে। এর পর শ্রীলঙ্কা রপ্তানী বাড়ানোর দিকে মনযোগ না দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের দিকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে। সে কারণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে কম। যদিও আমদানী ব্যয় বাড়তে থাকে। সমালোচকরা বলছেন, অপ্রয়োজনীয় সব বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করতে যেয়ে সরকারও বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ করেছে।

২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭শ কোটি ৬০ লাখ ডলার। কিন্তু ২০২০ সালে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় মাত্র ২শ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের কী পদক্ষেপ ছিল?
২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে কর কমানোর সিদ্ধান্ত নেন। যার অর্থ দাঁড়ায় রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য সরকার বৈদেশিক মুদ্রা কিনতে সরকারের হাতে তেমন অর্থ থাকে না। ২০২১ সালে বৈদেশিক মুদ্রা যখন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখন মুদ্রা সংরক্ষণে সরকার রাসায়নিক সার আমদানীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কৃষককে অর্গানিক সার প্রয়োগের নির্দেশনা দেয়া হয়। এ পদক্ষেপের ফলে কৃষি উৎপাদনও ব্যাপক হারে কমে যায়। খাদ্যের চাহিদা মেটাতে আমদানীর উপর নির্ভর করতে হয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আরো প্রকট হয়ে ওঠে।

সেসময় থেকে সরকার দৈনন্দিন ব্যাবহারের বাইরের পণ্য যেমন গাড়ী, জুতা, নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যদ্রব্য  আমদানীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দেশি মুদ্রার মান কমিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন দেশ রপ্তানী আয় বাড়িয়ে থাকে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকার দেশী মুদ্রার মান কমাতে অস্বীকৃতি জানায়।

শেষ পর্যন্ত দেশটির সরকার এ বছরে এসে মুদ্রার মান কমাতে বাধ্য হয়। ডলারের বিপরীতে রুপির অবমূল্যান হয় ৩০% পর্যন্ত।

শ্রীলঙ্কাকে কী পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে?
শ্রীলঙ্কা সরকারকে ঋণ পরিশোধের জন্য এ বছর ৭শ কোটি ডলার দিতে হবে। আগামী কয়েক বছরেও শ্রীলঙ্কাকে একই পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এই অর্থ যোগাড় করতে সরকার বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করতে চাচ্ছে কিন্তু মুদ্রার মান যে হারে কমতে শুরু করেছে তাতে খুব কম সংস্থাই সরকারকে এই অর্থ দিতে সক্ষম হবে। ফলে বর্তমাণ ঋণ পরিশোধ করতেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো কমতে থাকবে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
এ মাসের শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে শ্রীলঙ্কার রাজপথ উত্তাল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় সামর্থ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় জনগণ ক্ষুব্ধ। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যপণ্যের দাম ৩০% বেড়ে গেছে। সে কারণে খাদ্যদ্রব্যের বাইরে মানুষ আর কোন কিছু কিনতে পারছে না। অনেকে আবার প্রতিবেলার খাবার কিনতেও পারছেন না।

জ্বালানী সঙ্কটের কারণে পেট্রোল স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন। জ্বালানী স্বল্পতার যাতায়াত ব্যবস্থাও বিঘ্নতি হচ্ছে। বিবিসিকে শ্রীলঙ্কার এক নারী যাত্রী জানিয়েছেন, আগে বাস পেতে বড়জোর ১৫ মিনিট অপেক্ষা করা লাগতো। এখন দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাস পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো কখনো বাসের জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে মাঝপথে নেমে যেতে হয়।

গণহারে মন্ত্রীদের পদত্যাগের ঘটনার পরও প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।

গণবিক্ষোভ বাড়তে থাকলে প্রেসিডেন্ট কারফিউ ঘোষণা করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করেন। এত নিষেধাজ্ঞাও রাজপথ থেকে মানুষকে সরাতে পারেনি। এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেন।

এর পরে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে তার মন্ত্রীপরিষদের সব সদস্যকে বরখাস্ত করেন।  এর মধ্যে তার ভাই, প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসেও আছে। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও বরখাস্ত করেন।  পরে নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া হয়। সেই নতুন অর্থমন্ত্রীও নিয়োগে ২৪ ঘণ্টার ভেতরেই পদত্যাগ করেছেন।

এ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বিরোধী নেতাদের মন্ত্রীপরিষদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু বিরোধী নেতারা সে আহ্বান প্রত্যাখান করেন। তার উপর সরকারি জোটের ৪০ জন এমপি জোট থেকে বের হয়ে গেছেন।

সঙ্কট মোকাবেলায় অন্য দেশের কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা কতটা সহায়তা পেল?
গত মার্চে শ্রীলঙ্কা সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর কাছ থেকে বেল আউটের দাবি জানায়। এটি আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর পি নানদালাল বিরাসিংহে আইএমএফ এর সঙ্গে সমঝোতায় নেতৃত্ব দিবেন। যদিও নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেয়া পর্যন্ত এ আলোচনা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

এর মধ্যে বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী দেশ ভারত শ্রীলঙ্কাকে জ্বালানী সহায়তা পাঠিয়েছে।  শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করতে চীন দুদেশের মুদ্রা বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সঙ্কট মোকাবেলায় জাপান এবং বাংলাদেশ থেকে নতুন করে ঋণও নিয়েছে।

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View