ঈদের ছুটির আগে ও পরে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু সড়ক দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি হচ্ছে। দু:খজনক হলেও সত্য যে বিষয়টি প্রতিবছরই একটি নিত্যবিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোমবার সকালেও ঢাকা আরিচা মহাসড়কে ঢাকার ধামরাইয়ে যাত্রীবাহীবাস ও পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছে।
মাস ভিত্তিক বিভিন্ন দুর্ঘটনার জরিপে যে তথ্য উঠে আসে, তা রীতিমতো শঙ্কার। প্রতিমাসেই বহু মৃত্যু হয়ে থাকে সড়ক-মহাসড়কে। তবে ঈদের সময়ে এই দুর্ঘটনা বেড়ে যায়।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর তথ্য অনুযায়ী গড়ে প্রতিদিন ১৮ জনের প্রাণহানি হচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এ সংখ্যা আরো বেশি। তাদের মতে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ৫৫ ব্যক্তির প্রাণহানি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণা বলছে, দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ১২ হাজার মানুষ নিহত এবং ৩৫ হাজার আহত হয়। বলা বাহুল্য, সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সঠিক পরিসংখ্যান কোথাও পাওয়া যায় না। সব দুর্ঘটনা ও হতাহতের হিসাব থানায় লিপিবদ্ধ হয় না বা সংবাদপত্রেও আসে না।
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও সড়কে মৃত্যু থেমে ছিল না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে, এখনো ঘটছে। বিষয়টি চিন্তার।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ চালকের অদক্ষতা ও প্রতিযোগিতাপ্রবণ মনোভাব, সুতরাং সর্বাগ্রে চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান প্রদান নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ ও ধৈর্যের শিক্ষাও দিতে হবে। সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব দুঘর্টনা ও প্রাণহানির অন্যতম কারণ হওয়ায় পথচারী, যাত্রী, চালক—সবাইকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদের সময় অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তা আর অভিজ্ঞতাহীন চালকের সংখ্যা বেড়ে যাবার কারণের দুর্ঘটনা বেড়ে যায় বলেও ধারণা করা হয়।
সড়ক-মহাসড়কে বেঘোরে মৃত্যু কারোরই কাম্য নয়। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের সারাজীবনের সমস্যার কারণ হয়ে থাকে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া কয়েকযুগ ধরেই হয়ে আসছে, বেরও হয়েছে অনেককিছু। তারপরেও বছর বছর দুঘর্টনা নতুনরূপে ফিরে আসছে। এবিষয়ে দায়িত্বশীল সবার কার্যকর মনোযোগ ও পদক্ষেপ একান্ত কাম্য।