চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

আসন্ন কেন্দ্রীয় সম্মেলন নিয়ে যা হচ্ছে ছাত্রলীগে

KSRM

ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ উত্তির্ণ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলে আসছিলেন, দ্রুতই ছাত্রলীগের সম্মেলন দেওয়া হবে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ না উল্লেখ করায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সম্মেলন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ছিল ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্ধোধন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন, আগামী মার্চে ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে।

Bkash July

তিনি বলেন: একটা খবর দেব, সুখবর। আমি নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলেছি। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করুন। আগামী মার্চ মাসে, স্বাধীনতার মাসে সম্মেলন হোক- এটা নেত্রীর ইচ্ছা। সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন, মার্চে সম্মেলন।

তার এ ঘোষণার পর থেকেই সম্মেলনকে ঘিরে আলাপ আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি বা বিভিন্ন রাজনৈতিক ফোরামে এখন আলোচনার বিষয় একটাই, তা হলো ছাত্রলীগের সম্মেলন।

Reneta June

সম্মেলনের প্রস্তুতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: দ্রুতই আমরা সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের সম্মেলনের বিস্তারিত তুলে ধরবো। তবে কবে এ সংবাদ সম্মেলন হবে তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ তিনি বলেননি।

সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসার পর পদপ্রত্যাশী এবং অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের যে অংশটি গত কিছুদিন যাবত গঠনতন্ত্র মেনে সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তারা মনে করছেন সময় মত সম্মেলন না হওয়ায় ছাত্রলীগের মধ্যে যে অচলায়তন সৃষ্টি হয়েছিল তা অনেকটা কেটে যাবে।

ছাত্রলীগের এই অংশে রয়েছেন একাধিক সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক এবং সম্পাদক পর্যায়ের নেতারা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে সামনে রেখে গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘সম্মেলন প্রত্যাশী নেতাকর্মীবৃন্দ’র ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় তারা নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করছেন। এদের মধ্যে ছিলেন সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আদিত্য নন্দী এবং যুগ্ম সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।

এরপর গত বুধবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন প্রত্যাশী এই নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা এনামুল হক শামীম এবং দেলোয়ার হোসেন। এই দুই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর তারা দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বৈঠকে উপস্থিত একজন জানিয়েছিলেন, নেতাদের আশ্বাসে সম্মেলনের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। এই বৈঠকের তিনদিনের মাথায়ই সম্মেলনের ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের।

সম্মেলনের ঘোষণা আসার পর সম্মেলন প্রত্যাশীদের অন্যতম ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক সায়েম খান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: এ সম্মেলন ছাত্রলীগে তৈরি হওয়া অচলায়তনের বৃত্ত ভাঙার প্রচেষ্টা এবং  ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের প্রতি জননেত্রী শেখ হাসিনার যে শ্রদ্ধাশীল মনোভাব দেখিয়েছেন তাতে ছাত্রলীগের একটি বৃহত্তর অশের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজমান।

তবে বড় অংশের মধ্যে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা দেখা গেলেও সাবেক হতে যাওয়া এবং বয়স উত্তির্ণ হয়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে হতাশাও দেখা যাচ্ছে। আগের কমিটির (সোহাগ-নাজমুল) নেতাদের এখনও অন্য কোন সংগঠনে বন্দোবস্ত না করেই আরেকটি কমিটির নেতারা সাবেক হয়ে গেলে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করবে বলে মনে করছেন বর্তমান কমিটির অন্যতম যুগ্ম-সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শাহেদ।

ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে শহিদুল ইসলাম শাহেদ বলেন: এখন কোন সময়ের সম্মেলন? সম্মেলন করার যদি প্রয়োজনই হয় তা গঠনতন্ত্র মেনে দু বছরের মাথায় কেন করা হল না? এমন তো কোন কঠিন সময় পার হতে হয়নি যেজন্য সম্মেলন ৬ মাস বা ১ বছর পরে করা হবে বা হচ্ছে? সোহাগ ভাই-নাজমুল ভাইয়ের কমিটির নেতাদের এখনো কোথাও প্রোভাইড করা হয়নি। এখন যদি আবার সম্মেলন করা হয় তাহলে আমাদের এই কমিটির নেতৃবৃন্দকে কোথায় প্রোভাইড করা হবে? এমন বন্দোবস্ত না করে হুটহাট করে সম্মেলনের কথা বললে নেতা-কর্মীদের মন দুর্বল হয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি লিখেছেন: যদি সম্মেলন মার্চেই হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে নতুন কমিটি কতটুকু রাজপথে থাকতে পারবে? কারণ নতুন সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে বুঝতে বুঝতে কমপক্ষে ৫-৬ মাস সময় লাগবে। তাছাড়া কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার কাজ আছে। এসব কিছু সামলিয়ে বিএনপি-জামাতের আন্দোলন, সংগ্রাম প্রতিহত করা নতুন কমিটির পক্ষে কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার যেকোন সিদ্ধান্তের প্রতিই পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন এই নেতা।

২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবাং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন। এর প্রায় ছয় মাস পর ৩০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ দুই বছর। সে হিসেবে গত জুলাইতেই শেষ হয়েছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ।

বিজ্ঞাপন