চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

আশা হারালে চলবে না

করোনার ভয়াল থাবায় লণ্ডভণ্ড দুনিয়া। এই মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে মানুষের পাশে সবার আগে দাঁড়ায় সামাজিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক ও উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক করোনা প্রতিরোধে কী উদ্যোগ নিয়েছে বা নিচ্ছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ব্র্যাকের নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি বলেন: ‘‘গত কয়েকদিন ধরে আমাদের ফাউন্ডেশনের ছেলে মেয়েরা মাস্ক বানিয়ে চলছে। ফ্রম দা পিপল হু ব্রট আড়ং, দে আর মেকিং মাস্কস। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দু লাখ মাস্ক বানাবে। পাশাপাশি পিপিই’র স্যাম্পল আনা হয়েছে, কাপড় চলে আসবে শিগগিরি। আশা করি সেটাও করতে পারবে তারা। লিফলেট দেয়া, বাসে disinfectant দেয়া, যৌন পল্লিতে খাবার দেয়া, মানুষকে বোঝানো, প্রযুক্তির মাধ্যমে pre screening tool তৈরী, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য call সেন্টার, ভিডিও campaign তৈরি এমন অসংখ্য কাজ। নিজে করছেন,পার্টনার নিয়ে করছেন। এ যেন সেই আটাশির বাংলাদেশ যখন বন্যার্তদের জন্য সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিজেদের সংগঠনের কথাই শুধু বলি কেন, চারিদিকে এমন অসংখ্য উদ্যোগ। সবাই যা পারছে, করছে। আরো অসংখ্য মেসেজ আসছে নতুন idea নিয়ে। প্রবাসীরা লিখছেন – কী করতে পারি। হাজারটা coordination নিয়ে ব্যস্ত থাকায় উত্তর দিতে পারিনি।। আস্তে আস্তে গুছিয়ে নিয়ে উত্তর দেব। অনেক ভয় আর দুশ্চিন্তার মাঝেও খুব ভালো লাগে মানুষের এই উদ্যম আর এই মানবিকতা। করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই আমাদের দেশের, আমাদের প্রত্যেকের আপনজনের নিরাপত্তা আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই।

Bkash July

গতকাল আমাদের কর্মীদের জন্য নিচের এই চিঠি লিখেছি। উৎসর্গ করছি সবার প্রতি, যারা অনেক বিপত্তির মাঝেও আশার বাতি জ্বালিয়ে রেখেছেন। আপনারাই আমাদের আশার বাতি।

তবুও কোথাও হচ্ছে কিছু ভালো,
তবুও কোথাও জ্বলছে আশার আলো।
ভালো মানুষের আলোর মিছিলে পৃথিবী বদলে যাক!আশার বাতি আপনি
প্রিয় সহকর্মী,
আজ সকালে ঘুম ভাঙল আমাদের প্রতিষ্ঠাতার একটি কথা পড়ে। ‘দারিদ্র শুধু অর্থের দারিদ্র নয়। এটি সুযোগ, আত্মসম্মান, স্বাধীনতা ও সর্বোপরি আশার দারিদ্র। দারিদ্রের যাঁতাকলে পড়া মানুষ ভুলে যায় যে তাদের ভাগ্য পাল্টে যেতে পারে তাদের নিজেদের উদ্যোগের মাধ্যমেই। যখন তারা এটা বোঝে, সেটা হয় তাদের মানসিকতায় একটি বাতি জ্বলে ওঠার মতো। এই বাতিটি হলো আশার বাতি। তারপরে তারা যা করে, তা নিজেরাই করে।’

Reneta June

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আমাদের এক কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু যেই আশার কথা আবেদ ভাই বলেছেন, সেই আশা আমাদের হারালে চলবে না। কালকে যখন মাঠে ঘটে লিফলেট সহ আপনাদের ঝাঁপিয়ে পড়ার ছবি দেখছিলাম, তাই মনে হচ্ছিলো। আমাদের নির্ভীক মাঠ যোদ্ধারাই আমাদের আশার বাতি।

বিশ্বের এই নতুন যুদ্ধে আপনারা, আমরা সবাই এক কাতারে আমাদের এক মানবতার মালার সূত্রে। আজকে নিউইয়র্ক এ একজন মা যে কারণে ঘর বন্দি হয়ে আছেন, বাংলাদেশের শিবগঞ্জেও একই কারণে আরেক মা বাসায় বসে আছেন এক ভয়াবহ দুশ্চিন্তার মাঝে। কিন্ত তারই মাঝে আমরা বসে নেই। ঝাঁপিয়ে পড়েছি সবাই আমাদের নিজেদের শক্তি অনুসারে।। আমাদের আশা হারালে চলবে না, কারণ আমাদের অন্যদেরকেও আশা দিতে হবে। সঠিক তথ্য দিয়ে।

আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ হিসাবে ব্র্যাক সেন্টারে কর্মরত প্রায় চব্বিশশ কর্মীকে বাইশে মার্চ থেকে পঁচিশে মার্চ পর্যন্ত প্রযুক্তির সহায়তায় ঘর থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। এই সিন্ধান্তের কারণ তিনটি:
প্রথমত: অত্যন্ত সংক্রামক নভেল করোনা ভাইরাস কাছাকাছি থাকা একজন থেকে আরেকজনের কাছে ছড়ায়। শহরের অফিসের কাঠামোগত কারণে ঢাকা অফিসে একই বিল্ডিংয়ে স্বল্প পরিসরে বিশাল সংখ্যক কর্মী একসাথে কাজ করেন। প্রতদিন লিফট এ চলাচল, ক্যান্টিনে সমাগম, মিটিং রুম এ স্থানের সপ্ল্পতা ইত্যাদি নানা কারণে সংক্রমণের ঝুঁকির মাত্রা তুনামূলক ভাবে বেশি।

দ্বিতীয়ত: ঘনবসতিপূর্ণ শহর এলাকায় সামাজিক দূরত্ব মেনে না চললে, ব্র্র্যাক ঢাকা অফিসের কর্মীরা অন্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবেন। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে, এই মুহূর্তে সামাজিক ও স্থানীয় সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। তৃতীয়ত: বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে চিহ্নিত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ আমাদের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং যুদ্ধ। একটি যুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রের যোদ্ধার কাজের ধরণ ও দায়িত্ব বিভিন্ন রকম হয়। একদল সামনে থেকে যুদ্ধ করেন, একদল যুদ্ধ জেতার কৌশল তৈরি করেন, একদল যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও যুদ্ধে জেতার সরঞ্জামাদি সরবরাহের দায়িত্বে থাকেন।এই সময়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের কর্মীদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনাদের একেবারে সামনে থেকে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে প্রতিটি পরিবারকে নিরাপদ রাখতে লড়াই করতে হবে। আর সামনে থেকে যারা লড়াই করবেন, তাদের কে কেন্দ্রীয়ভাবে সর্বতভাবে সাহায্য করবেন ঢাকার কর্মীরা। আমরা আপনাদের সঠিক ও সেরা সহযোগিতা দিতেই বিভিন্ন কর্মীদের কাজের ধরণ ও কাজের পরিবেশের ঝুঁকি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।

বাড়ি থেকে কাজ বা work from home এর মানে ছুটি নয়। ঢাকা অফিসের সকল কর্মী নিজ নিজ ভূমিকায় এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠকর্মী দের সর্বোচ্চ সেবা ও সহযোগিতা দেবেন। বাসা থেকে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক ধরণের কাজ করা এখন পৃথিবী জুড়ে একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। জরুরি কাজে নিয়োজিত হেড অফিসের কর্মীরা ক্ষেত্র বিশেষে অফিসে আসবেন। ইতিমধ্যেই প্রত্যেক পরিচালক এই কর্মীদের তালিকা করেছেন ও দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়, ব্র্যাকের কৌশল নির্ধারণ, ফান্ড রেইসিং, জনসচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রম, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা এই কাজগুলো আমরা অধিকাংশই চালাতে পারছি অফিসে না এসে, প্রযুক্তির মাধ্যমে । কিছু নির্ধারিত কর্মীরা প্ৰয়োজনবোধে অফিসে আসবেন। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত একটি লেখা আপনারা পড়তে পারেন এখানে। http://blog.brac.net/bangla/নির্ভীক-ব্র্যাককর্মীদের/ )

একই সাথে নিরাপত্তা পর্যালোচনা করে মাঠপর্যায়ে অফিসের কাজের পরিবেশের পরিষ্কার পরিচ্ছনতা
নিশ্চিত করা, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জনসমাগম হতে পারে এমন কাজ স্থগিত করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন পদক্ষেপের বিস্তারিত আপনারা গত বৃহস্পতিবার পাঠানো পরিপত্রে পড়েছেন।

করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই আমাদের দেশের, আমাদের প্রত্যেকের আপনজনের নিরাপত্তা আর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই। এই দায়িত্ব থেকে ব্র্যাক কর্মীরা কিছুতেই পিছিয়ে যাবেননা, এই বিশ্বাস আমার আছে।

সারা দেশ তাকিয়ে আছে ব্র্যাকের দিকে। আমরা আবেদ ভাইয়ের যোগ্য উত্তরসূরী হবার প্রতিজ্ঞা করেছি। আমরা তাঁর স্মৃতির কাছে, দেশের মানুষের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই প্রতিজ্ঞার মর্যাদা রাখার পরীক্ষা এখন আমাদের সামনে।সর্বশক্তি নিয়ে ব্র্যাকের সকল কর্মী, যার যার অবস্থান থেকে, এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবেন। আমরা যাতে সাহসের সাথে, সহমর্মিতার সাথে, মানুষের প্রয়োজনে লড়তে পারি, বলতে পারি, ‘I am BRAC’, ব্র্যাক মানে আমি, আপনি, আমরা সবাই।’’

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View