চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন উপলক্ষে ক’দিন আগেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন শোবিজের একঝাঁক তারকা। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে সমর্থন দেয়াই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। তারকাদের সেই তালিকায় ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক রিয়াজ।
সেখানে প্রচারণায় অংশ নিয়ে এই অভিনেতা চট্টগ্রামের উন্নয়নচিত্র তুলে ধরতে সড়কপথকে ‘ইউরোপের কোনো রাস্তা’র সঙ্গে তুলনা করে একটি বক্তব্য দেন। যা অন্তর্জালে ভাইরাল হওয়ার পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্যে মেতে ওঠে নেটিজেনদের একাংশ। সেই প্রসঙ্গে এবার মুখ খুললেন রিয়াজ।
মঙ্গলবার রাতে নিজের ফেসবুকে দেয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রিয়াজ লেখেন, গত রবিবার আমি আমার কিছু সহতীর্থ তারকাদের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী ভাইয়ের নির্বাচনী প্রচারণাতে অংশ নিতে যাই। এয়ারপোর্ট থেকে নেমে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে আসার সময় মনে হয়, এতো বাংলাদেশের নয়- ইউরোপের কোন রাস্তা। অত্যন্ত হর্ষ ও গর্ববোধ করি এ নিয়ে। এরপর সারাদিন ধরে চলে উৎসবমুখর এবং স্বতঃস্ফূর্ত নির্বাচনী প্রচারণা। আর সবসময়ের মতোই চট্টগ্রামের মানুষের আথিতেয়তায় মুগ্ধ হই। চট্টগ্রামের মানুষের হৃদয় অনেক বড় ও তারা মানুষকে অনেক সম্মান করেন। সারাদিনের প্রচারণা শেষে ঢাকা এসে আমি ক্লান্ত হয়ে দুটা দিন বিশ্রাম নেই। বিশ্রাম শেষে ফেসবুক তথা সামাজিক গণমাধ্যমে এসে দেখি তুঘলকি কাণ্ড!
বিকৃতভাবে তার বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে রিয়াজ সেখানে লেখেন, ‘আমি নাকি বলেছি আমার কাছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার “পুরো রাস্তাটাই” ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে। কিছু ভুঁইফোঁড় অনলাইন মিডিয়াগুলোর প্রধান কাজই মানুষের বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে কিছু ক্লিক কামানো, এটাই তাদের রুজিরুটি। প্রথমত আমি প্রশ্ন করতে চাই আমার এই বক্তব্যের ভিডিও সবখানে আছে, আমাকে দেখাতে পারবেন সেই ভিডিওতে আমি কোথায় বলেছি যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ‘পুরো রাস্তাটাই’ ইউরোপের রাস্তা বলে মনে হয়েছে?’

উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এমনটা করা হয়েছে দাবী করে রিয়াজ আরো বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটিকে ভাইরালও করে। অন্যকোন সময় হলে কিংবা অন্য কেউ হলে আমার আসলেই হয়তো অনেক রাগ উঠতো কিন্তু আমার এই মুহূর্তে খুব হাসি পাচ্ছে। হাসি পাচ্ছে কারণ, যারা এই অশ্লীল আক্রমণগুলো করছেন তাদের সিংহভাগই হলো সেই কুচক্রী মহলের লোক যারা নাকি একজন রাজাকারকে চাঁদে দেখতে পায়। এরা রাজাকারকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ান, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ অব্দি এরা বাংলার সহজসরল মানুষগুলোকে বিভ্রান্তি এবং গুমরাহির মাঝে ফেলে দিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করে চলেছেন। দেশকে প্রতিনিয়ত পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডগুলোকে এরা বাঁধাগ্রস্থ করবার চেষ্টা করছে। যারা দেশের এতবড় সর্বনাশে লিপ্ত তাদের গুজবের ব্রহ্মাস্ত্রের কাছে আমি রিয়াজ এক তুচ্ছ বলি।
রিয়াজ বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমি চিন্তিত আমাকে নিয়ে নই, দেশের সরল মানুষগুলোকে নিয়ে।’
নেটিজেনদের কাছে প্রশ্ন রেখে অসংখ্য বাংলা ছবির জনপ্রিয় এই নায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশকে কি আপনারা এখনো এতোই ফেলনা মনে করেন? আপনাদের কি মনে হয় বাংলাদেশে আসলেই এমন কোন সড়ক কিংবা স্থাপনা নেই যা উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিতে পারে? নিজ দেশের প্রতি আপনাদের কি এতোটুকুও আস্থা নেই? এই আপনাদের দেশপ্রেম কি এতোই নড়বড়ে যে কিছু কুচক্রী গুজববাজের কথা শুনে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন?’
বিজ্ঞাপন
দৃঢ়কণ্ঠে রিয়াজ দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর সেই তলাবিহীন ঝুড়ি নেই। সেই দিন অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। আমরা এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দূর্বার বেগে ধাবমান।’
সবার কাছে অনুরোধ জানিয়ে শেষে রিয়াজ লেখেন, ‘আমি অনুরোধ করছি যে এসব গুজববাজদের কথায় কান দেবেন না। এরা দেশের শত্রু, এরা আপনার শত্রু। আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দেক, মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রিয় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে রক্ষা করুক এসব গুজববাজদের হাত থেকে। আর উন্নয়নের মহাসড়কে দেশ এভাবেই এগিয়ে যাক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে।’
বিজ্ঞাপন