বিজয়ের মাসে এনে দিয়েছেন উল্লাসের ক্ষণ। উঁচিয়ে ধরেছেন মেয়েদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যে জয় উৎসর্গ করেছেন দেশবাসীকে। প্রজ্বলিত সেই সাফল্যের মশালটা বহুদূর নিতে চান মারিয়া মান্ডা। সদ্য শিরোপাজয়ী অধিনায়ক বাংলাদেশকে নিতে চান এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপের মঞ্চে।
চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মারিয়া মান্ডা তুলে ধরলেন মেয়েদের ফুটবলে এগিয়ে যাওয়ার নানা গল্প। শোনালেন আশারবাণী। বুনলেন স্বপ্নের বীজ। ছড়ালেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্ফুলিঙ্গ।
‘ভালো কিছু করতে হলে অবশ্যই সকল খেলোয়াড়কে একত্রিত থাকতে হবে। আর ধারাবাহিকভাবে অনুশীলন চালিয়ে যেতে হবে। অনুশীলনে সবাইকে মনযোগী থেকে খেলার প্রতি ফোকাস ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। তাহলেই আমরা দেশের জন্য আরও কিছু করতে পারব। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ খেলতে পারব।’
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে সাফে কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের অধিনায়কের ভূমিকায় সফল মারিয়া। জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতাও এরইমধ্যে হয়ে গেছে। সাফল্যের পরিধি সাফের গণ্ডির ভেতরে রাখতে চান না ফুটবলকন্যা। এশিয়া কাপ, এমনকি বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশকে তুলে নিতে তাই করছেন পণ।
এত অল্প বয়সে মারিয়াদের বড় বড় সব সাফল্য পুরো দেশকে উদ্বেলিত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বন্দনা চলছে সর্বত্র। মাতামাতি শেষ নেই। তারকাখ্যাতির গ্রাফ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আগ্রহের কেন্দ্রে অবস্থান তাদের। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে খ্যাতির জোয়ারে পা মাটিতে রাখতে ভুলে যান। পথ হারিয়ে প্রতিভার অপচয়ও হয়ে যায় অনেক সময়।
অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ফুটবলাররা যেদিক থেকে আলাদাই। উপভোগ করছেন উচ্ছ্বাসটা। চমৎকারভাবেই সামলে নিচ্ছেন সবার অতি-আগ্রহের জায়গাগুলোতে। সেজন্য অনেক ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে লাল-সবুজের তারকাদের।
‘ডিসিপ্লিন থেকে শুরু করে সবকিছুই আমাদের মেনে চলতে হয়। সেভাবেই আমরা চলাফেরা করি। পরিবারের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটানোর মুহূর্তগুলো আমরা ত্যাগ করেছি। আমরা দেশের জন্য লড়াই করব, দেশের জন্য কিছু করতে হবে এই চিন্তায় খেলে পুরো দল একত্রিতভাবে আনন্দ উদযাপন করছি।’
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুর। কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েদের অনেকেই এখন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে চাপিয়ে সকলের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন। সাফল্যে পাড়ি দেয়ার সেই পথটা মোটেও সহজ ছিল না।
সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তো ছিলই। ছিল পর্যাপ্ত অনুশীলন সুযোগের অভাব। সেসব পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসা মারিয়াদের অনেকেরই। দেশের নারী ফুটবলের ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক হয়ে ওঠার পথের সেইসব কিংবদন্তি গল্পও শোনালেন মারিয়া।
‘প্রথম যখন খেলায় অংশগ্রহণ করি, তেমন কারোর সমর্থন ছিল না। কেউ আমাদের চিনতো না। আমাদের গ্রামের নাম বললে ঢাকা শহরের কেউ চিনতো না। খেলায় আমরা যখন ভালো কিছু করি, তখন গ্রাম আর উপজেলার নাম সবাই চিনতে পেরেছে। আমরা জাতীয় দলে আসতে পেরেছি এবং ক্যাম্প করছি। সেই কারণে আমরা সাফল্য দিতে পারছি। খুবই ভালো লাগছে।’
দলে ভূমিকা দুটো। খেলোয়াড় ও অধিনায়ক। খেলোয়াড় হিসেবে তো সামনে থেকে নেতৃত্ব দেনই। অধিনায়কত্বেও কেড়ে চলেছেন আলো। বয়সভিত্তিক সব দলে নেতৃত্বের পথে এবার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে শিরোপা জয়। কখনও কি খেলোয়াড় মারিয়াকে ছাপিয়ে যান অধিনায়ক মারিয়া? কিংবা কখনও কি মুখোমুখি দাঁড়ায় দুটো ভূমিকা? কোনটির গুরুত্বে নিজেকে নিবিষ্ট রাখতে চান? জানালেন, খেলোয়াড় হিসেবে দলে অবদান রাখাটাই তার কাছে শেষ কথা।
‘আমার কাজ দেশের জন্য কোনকিছু করা। আমি দেশের জন্য করব, আর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমাকে অধিনায়কত্ব দিক কিংবা না দিক, আমার দেশের জন্য লড়াই করতে চাই। অধিনায়ক হিসেবেই ভালো করতে হবে সেটা নয়। যদি অধিনায়কত্ব দেয়া হয়, সেভাবেই দায়িত্ব নিয়ে ভালো পারফরম্যান্স করব।’
চলার পথে সমর্থন-উৎসাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাঠের সুপার হিরোইনদের অনুপ্রাণিত করতে মাঠের বাইরের সমর্থন কম কাজে দেয় না। দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা তাই ভোলেন না মারিয়ারা। সবাইকে ধন্যবাদ জানাতেও ভুললেন না টাইগ্রেস তারকা।
‘মাঠে খেলা দেখতে এসে তারা আমাদের উৎসাহিত করেছেন। উৎসাহ পেয়ে আমরা আরও উজ্জীবিত হয়েছি। ভালো পারফরম্যান্স করতে পেরেছি। তারা যদি সবসময় আমাদের এভাবে উৎসাহিত করেন, পাশে থাকেন, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করতে পারব।’