নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা৷ দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার বক্তব্যকে ঘিরে৷ তিনি বলেছেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’
কে এই আব্দুল কাদের মির্জা? তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত নেতা৷ তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কে? কেন তিনি সরকার দলের মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করছেন৷ তবে পক্ষপাতিত্বটা করবে কে? যে করবে তার ক্ষমতা কি দলের থেকে বেশি? সেখানে তাহলে মূল ক্ষমতাটা কার হাতে? কিছুদিন আগে এমপি নিক্সন চৌধুরীও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন৷ তাদের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়েছেন৷ সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন জাগে।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘তারা অনেক উড়ছেন, তারা মনে করেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনেছেন তারা। শেখ হাসিনা চাইছেন ফল, তারা এনে দিয়েছেন গাছসহ, কত অতি উৎসাহী। প্রশাসনের কিছু লোক এসব করেছেন শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য।’
তার এই বক্তব্য কি উড়িয়ে দেয়ার মতো? কাউকে ক্ষমতায় বসানোর ক্ষমতা কি প্রশাসনের না জনগণের?তার অভিযোগ সত্যি হলে এই প্রশাসন নির্ভরতা সুফল দেবে না, কুফল বয়ে আনবে। নির্বাচন, রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে আজ কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
স্থানীয় নির্বাচনে দেয়া হচ্ছে দলীয় প্রতীক৷ সরকার দলের প্রার্থী নানা ফন্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে নির্বাচন হতে দূরে সরিয়ে রেখে নির্বাচনকে ঠেলে দিচ্ছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে৷ বেশিরভাগ জায়গাতেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে একদলীয় প্রতীকের নির্বাচন৷ সেখানে সরকারদলীয় কতিপয় বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে নির্বাচনই হতো না৷ হতো বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়ার ঘটনা৷ নির্বাচন ছিল একসময় মানুষের উৎসবিক আনন্দের বিষয়৷ এখন আর এ নিয়ে মানুষের মাঝে কোন আগ্রহ নেই। এই আগ্রহ হারানোর দায়টা কার?
এক্ষেত্রে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশনের কী করণীয়? দল বলছে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে দাঁড়ালে তাকে বহিষ্কার করা হবে৷ কেন? তবে কি তারাও চায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যাওয়া? এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী? তারাও কি তা-ই চায়?
এর ফল আমরা দেখছি। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় ঢাকা দক্ষিণের দুই মেয়রের কথা। দেশে কোনো কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় এখন আওয়ামী লীগেই শুরু হয়েছে বিরোধ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র থাকার যোগ্য নন বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। আবার সাবেক মেয়রের দুর্নীতির খতিয়ানও বের হতে শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র শাখা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক রেজাউল করিম চৌধুরী কারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করছে এর প্রতিকার চাইছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কাছে৷ সমালোচনা হচ্ছে হঠাৎ করে নেতা হয়ে ওঠা অনুপ্রবেশকারীদেরকে নিয়ে। সমালোচনা চলছে মন্ত্রীর ডাকটিকেটে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ লেখা নিয়ে৷ আসলে কী ঘটছে আওয়ামী লীগে? কী ঘটছে গণতান্ত্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে?
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এক দলীয় প্রতীকে৷ আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকলে এখানে নির্বাচনই হতো না৷ ঘটতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা।
৭ জানুয়ারি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ পত্রের শিরোনাম হয়েছে: ‘মোহনগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচার মাইক ভেঙে নদে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ’৷ কেন এমন বেপরোয়া হয়ে উঠছে সর্বত্র৷ একে অপরের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে উঠছে সবাই৷ এর পরিণতি কী? নেতার বিরুদ্ধে নেতা, দলের বিরুদ্ধে দল৷ সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রশাসনের বিরুদ্ধে দল৷ তবে কি প্রশাসন দলের ঊর্ধ্বে উঠে গেছে? নিক্সন চৌধুরী ও মির্জা কাদের কি শুধু শুধু এমন কথা বলছেন? সময় থাকতে বিষয়টির আসল রহস্য উন্মোচন করা উচিত।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)