আবারও মন কেড়ে নিলেন সেই ‘জোকার’
অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলা কথাগুলোই সাড়া ফেলছে বিশ্বের মানবিক মানুষের কাছে…
নানা আলোচনা আর ইতিহাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ৯২তম অস্কার অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান। পুরস্কার প্রদান কিংবা অস্কারের খুচরো বিষয় নিয়ে এখনো সরগরম বিশ্ব সংবাদমাধ্যমগুলো। তাতে হাওয়া দিচ্ছেন সিনেমার কোটি ভক্ত, পাঠক আর দর্শক! তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবার মুখে মুখে প্রশংসা শোনা যাচ্ছে ‘জোকার’ খ্যাত জোয়াকুইন ফোনিক্স-এর!
জোকার চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে ‘সেরা অভিনেতা’র পুরস্কার পেয়েছেন, প্রশংসা অবশ্য এজন্য নয়। বরং অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলা কথাগুলোই সাড়া ফেলছে বিশ্বের মানবিক মানুষের কাছে। যে কথাগুলোর পরতে পরতে আছে জাতিবিদ্বেষ, পশুদের অধিকার এবং সমসাময়িক ইস্যু। নির্মম সমালোচনা করেছেন নিজেরও। অস্কারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে কথাগুলো বলেছেন ফোনিক্স, প্রায় হুবুহু তুলে ধরা হলো এখানে :
আমি কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। আমি মনে করছি না যে কোনো সহকর্মীর (সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারে মনোনয়ন পেয়েছিলেন যারা) থেকে আমি ভালো কাজ করেছি। কারণ আমাদের সবার ভালোবাসার জায়গাটা এক- আর সেটা হলো ‘সিনেমার জন্য ভালোবাসা’। অস্কার পাওয়ার চেয়ে এখানে অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টিই আমার জন্য বড় পুরস্কার।
যাদের কথা বলার ক্ষমতা নেই, তাদের পক্ষে এখানে দাঁড়িয়ে আমি কিছু কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। কয়েকটি সমস্যা নিয়ে কিছু ভাবনা মাথায় এলো।
মাঝে মাঝে আমরা মনে করি যে কোনো বিষয়ে কথা বলে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছি। কিন্তু আমি বিষয়টি খুব সাধারণভাবে দেখি। লিঙ্গ বৈষম্য বা বর্ণবাদের মতো বিষয় নিয়ে যখন কথা বলা হয়, তখন আসলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়।
এক জাতি, একজন মানুষ, এক বর্ণ, এক লিঙ্গ বা এক প্রজাতির শুধু প্রভুত্ব ফলানোর অধিকার থাকবে, এমন মতবাদের আমরা বিরোধিতা করি।
প্রকৃতি থেকে আমরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। পৃথিবীটাকে আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিতে দেখায় অনেকেই অপরাধ-বোধে ভুগি আমরা। প্রকৃতির কাছে আমরা যাই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে। দুধের জন্য গরুর কাছ থেকে বাছুরকে কেড়ে নেয়া হয়। আমরা কফিতে, বা অন্যান্য খাবারে দুধ ব্যবহার করি, তাতে বাছুরটি বঞ্চিত হয়।
আমরা নিজেকে বদলাতে ভয় পাই। কারণ আমরা মনে করি আমাদের ত্যাগ শিকার করতে হবে, কোনো কিছুর দাবী ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু মানুষ তো সেরা। সৃষ্টিশীল এবং উদ্ভাবক। আমরা তৈরি করতে পারি, উন্নত করতে পারি এবং নতুন সিস্টেম তৈরি করতে পারি যা প্রকৃতির সব প্রাণীর জন্য উপকারী।
বোকার মতো জীবন কাটিয়েছি, স্বার্থপরের মতো। নিষ্ঠুর হয়েছি অনেক সময়, আমার সঙ্গে কাজ করে অনেকে বিপদে পড়েছেন। কৃতজ্ঞ এই যে রুমের অনেকেই আমাকে কাজের দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছেন। একে অপরকে সাহায্য করাই সবচেয়ে ভালো। অতীত ভুলের জন্য যেন আমরা একে অপরকে বাতিল না করি, বরং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য একে অপরকে সাহায্য করা উচিত। নতুন শিক্ষা দেয়া উচিত, পথ দেখানো উচিত।
আমার ভাই রিভারের বয়স যখন ১৭ ছিল, তখন ও এই লিরিকটি লিখেছিলো, ‘রান টু রেসকিউ উইথ লাভ অ্যান্ড পিস উইল ফলো।’