চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

আফগানিস্তানের অকুতোভয় নারীরা

KSRM

‘আমরা সমান অধিকার চাই, আমরা সরকারে নারীদের দেখতে চাই।’ বুধবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের রাস্তায় মিছিল করার সময় কয়েক ডজন নারী বিক্ষোভকারীর মুখে এমন স্লোগান শোনা যায়। 

তার একদিন আগে তালেবান তাদের অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভা ঘোষণা করে। কিন্তু সেখানে কোনো নারীকে রাখা হয়নি এবং দেশটিতে এখন নারী বিষয়ক কোনো মন্ত্রণালয়ও নেই।

নারীদের প্রতি এমন দমন-পীড়নের সমালোচনা করে এরই মধ্যে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা তালেবান সরকারকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, তালেবানদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনো মিল নেই।

সারা (ছদ্মনাম) নামের একজন নারী বলেন, আমরা এটা গ্রহণ করতে পারছি না, সেজন্য রাস্তায় নেমে এসেছি। গত সপ্তাহ থেকে চলমান বিক্ষোভে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিলেন তিনি।

আরেক বিক্ষোভকারী জিয়া (ছদ্মনাম) বলেন, আমরা শান্তিতে বিক্ষোভ করছিলাম। তারপরই দেখলাম ৪-৫টি গাড়িতে অন্তত ১০ জন করে তালেবান আমাদের অনুসরণ করছে।

বিক্ষোভকারী নারীরা জানান, পরে তাদের থামানো হয়েছে, বেত্রাঘাত করা হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেয় এমন লাঠিপেটা করা হয়েছে।

জিয়া বলেন, ওরা আমার কাঁধে দুবার আঘাত করেছে। আমার সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করছি।  এখনও ব্যথা আছে আর হাত নাড়াতেই পারছি না।

‘‘ওরা অনেক নোংরা ভাষায় গালি দিচ্ছিলো আর নিপীড়ন করছিলো। যেসব নামে ডাকছিলো সেগুলো আবার উচ্চারণ করাও লজ্জার।’’

সারা বলেন, সবাইকে আঘাত করেছে। আমাকেও মেরেছে। তারা বলছিলো বাড়িই নারীর জায়গা, ওখানে ফিরে যাও।

বিক্ষোভ অবদমনের ভিডিও করতে গেলে সারার হাত থেকে ফোন নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় এক তালেবান। তবে তালেবানরা বলছে, তারা নারী অধিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, নারী শিক্ষা বা চাকরি করার বিরুদ্ধে তারা নয়।

কিন্তু গত ১৫ই আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জনস্বাস্থ্য বিভাগ ছাড়া সব নারীকে কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছে যতদিন না নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ততদিন।

এর আগেও নিরাপত্তার অজুহাতে ১৯৯০ সালে নারীদের কাজ থেকে বিরত করেছিলো তালেবানরা। সারার মতো অনেকের ভয় এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

সারা সরকারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি নিজের একটি ব্যবসাও চালান। তার পরিবার তার জীবন নিয়ে ভীত।

‘‘ওরা বলে বিক্ষোভে যেও না। তালেবান তোমাকে মেরে ফেলবে। এখানে আসার জন্য ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করেছি।  আমাদের কথা বলা জরুরি। আমি ভীত নই। ধীরে ধীরে মরার চেয়ে একবারে মরাই ভালো।’’

অন্যদিকে জিয়ার পরিবারই তাকে বিক্ষোভে যেতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বিবাহিত, চার সন্তানের জননী, তার মধ্যে একটি সদ্যোজাত।

জিয়া বলেন, তালেবানরা কয়েকদিনের জন্য আসেনি। তারা দীর্ঘদিন থাকবে। আমাদের অধিকার অর্জন করে নিতে হবে।  শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, আমাদের সন্তানদের জন্য। হয়তো তালেবানরা আমাদের খুঁজে বের করবে এবং টার্গেট করবে। কিন্তু কোনো বিকল্প নেই। আমাদের চালিয়ে যেতে হবে।

হেরাতে এই সপ্তাহের শুরুতে বিক্ষোভে তালেবান গুলি চালালে তিনজনের মৃত্যু হয়। গত কয়েকদিনে আরও বেশি নৃশংস হয়ে উঠেছে তালেবান।

আফগানিস্তানে কার্যকরভাবে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে তালেবান। তারা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের অবশ্যই আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে, তারপর নিরাপত্তা পরিষেবাগুলিকে প্রতিবাদের স্থান এবং সময় এবং এমনকি ব্যানার এবং স্লোগান সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।

এর ফলে জিয়া এবং সারাদের জন্য আফগানিস্তানে তাদের অধিকার দাবি করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View