চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

অপরাধ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে করোনাকালে গুজব-হয়রানি ও প্রতারণা

KSRM

করানোর মহামারীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সমগ্র বাংলাদেশের আনাচে কানাচে নতুনভাবে শুরু হয়েছে গুজব, হয়রানি ও প্রতারণার নতুন সংস্কৃতি। গুজব, হয়রানি ও প্রতারণা সারা বাংলাদেশে এক সর্বব্যাপী জাল বিস্তৃত হয়েছে যা উদঘাটন অত্যন্ত জরুরী। আমি মনে করি এসবের প্রকৃতি না জানলে মানুষ তার করণীয় সম্পর্কে বুঝতে পারবে না। আমি যেহেতু অপরাধবিজ্ঞান পাঠদানের সাথে যুক্ত, তাই মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে থেকে এই বিষয়ে আলোচনা করোনাকালীন সময়ে সাময়িক গুজবের ধরণ প্রকৃতি, হয়রানি ও প্রতারণার মাধ্যমে মানুষকে ঠকানোর বিষয়েই আলোচনাকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইবো।

করোনার বিস্তার ও চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু শিক্ষিত-অশিক্ষিত সুবিধাভোগী মানুষ ইতিমধ্যে গুজব ছড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে কিছু তাৎক্ষণিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে, যা আমরা বিভিন্ন পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদে দেখতে পাচ্ছি। এই সম্পর্কিত গত কয়েকদিনের বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় ধারাবাহিকভাবে চোখ দিলে কিছু সংবাদ দেখলেই আমরা গুজব ছড়িয়ে মানুষের সাথে প্রতারণার গতিপ্রকৃতি বুঝতে পারব।

Bkash July

বিষয়-১: করোনা টিকা, ঔষধ আবিষ্কার ও চিকিৎসা সংক্রান্ত গুজব ও প্রতারণা

সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে করোনা সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা, জ্ঞান ও নেতিবাচক ধারণার ফলশ্রুতিতে একধরণের মানুষ করোনার টিকা, ঔষধ আবিষ্কার ও চিকিৎসা নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে প্রতারণা শুরু করেছে। গত দুইতিন সপ্তাহে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের পাতায় চোখ বুলালে এই সম্পর্কিত খবরগুলো আমাদের চোখে পড়ে যা থেকে আমরা এই সময়ে গুজব ছড়িয়ে দিয়ে প্রতারণার ভয়াবহতা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারি।

Reneta June

পত্রিকাগুলোর সংবাদের ধরন এমন: ‘করোনাভাইরাসের টিকা বিক্রির অভিযোগে নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে একজন গ্রেপ্তার’ (দৈনিক আমাদের সময়, ২২ মার্চ ২০২০); ‘কিশোরগঞ্জের নান্দাইলের খামারগাঁও গ্রামে শাহীন নামে এক প্রতারক ও তার সহযোগীকে ঔষধ বিক্রি জন্য ভোক্তা অধিকার আইনে ৬ মাস কারাদণ্ড ও তার সহযোগীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়’ (দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৭ মার্চ ২০২০); ‘খাগড়াছড়িতে করোনা চিকিৎসার নামে জার্মান হোমিও হলের চিকিৎসক ডা. সমীরণ চৌধুরিকে ভুয়া চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা’ (দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৭ মার্চ ২০২০); ‘নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় মাইকিং করে প্রতিষেধক বিক্রির সময় দুই যুবককে ২ বছর কারাদন্ড’ (দৈনিক ভোরের কাগজ, ২৯ মার্চ ২০২০); ‘চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে প্রতারক মনজুর আলী ও তার সহযোগী করোনা প্রতিরোধে ১৫০ টাকায় ভেষজ ঔষধ বিক্রি করতে গিয়ে মোবাইল কোর্টে শাস্তি’ (দৈনিক কালের কন্ঠ, ৩০ মার্চ ২০২০)।

সংবাদগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, তুলনামূলকভাবে শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের কার্যক্রম বেশি হচ্ছে। যদি আমরা প্রশ্ন করি, কেন গ্রামে গুজব ও প্রতারণার কার্যক্রম বেশি হয়? কারা এই ধরনের প্রতারণা সাথে বেশি যুক্ত হয়? তবে এর ব্যাখ্যা আমরা অপরাধ বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থেকেই খুঁজে পাই। প্রথমত, মানুষ যখন কোন অপরাধ সংঘটনের সাথে যুক্ত হয় তখন সে ঐ অপরাধের শাস্তি ও সুবিধাকে তুলনা করে যাকে অপরাধবিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘যৌক্তিক আচরণ তত্ত্ব’ বা র‌্যাশনাল চয়েস থিওরি’। ‘যৌক্তিক আচরণ তত্ত্ব’ অনুযায়ী অপরাধের পূর্বে এখানে কোন একজন প্রতারক তার অবৈধ নেতিবাচক আচরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করে, ধরাপড়ার ঝুঁকি সম্পর্কে তথ্য বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে, নিশ্চিত শাস্তির মাত্রাগত অবস্থা বা দিক সম্পর্কে সজাগ থেকে সে পরিকল্পনা করে।

যেহেতু শহর থেকে গ্রামের দূরত্বের কারণে সরাসরি প্রশাসনিক নজরদারী কম এবং তুলনামূলক গ্রামের মানুষ কম শিক্ষিত, অসচেতন ও অনেকক্ষেত্রে ধর্মভীরু সেহেতু প্রতারকদের ধরা পড়ার ভয় কম বলে তারা মনে করে। ফলে অনেকক্ষেত্রেই এ সময়ে প্রতারকগণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রামকে টার্গেট করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দ্বিতীয়ত, কোন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে কিংবা মহামারী, মড়ক-আকালের কালে সুযোগ বুঝে মানুষকে ঠকিয়ে কিছু মানুষ যারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে চায়। তারা বিভিন্ন সময়ে সুযোগ খোঁজে কিভাবে অল্পসময়ে কিছু কামিয়ে দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। তারাই এ ধরনের কাছে বেশি যুক্ত হয়। এবং এদের বেশিরভাগই গ্রাম্য ভবঘুরে বেকার, দরিদ্র কিন্তু বিপদগ্রস্থ মানুষ, কবিরাজ এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা এই ধরনের প্রতারণা সাথে যুক্ত হয়। ভালো খবর হলো, প্রকাশিত সংবাদগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে, তারা অধিকাংশই ভোক্তা অধিকার আইন ও প্রতারণা রোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনের ধারায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার হয়েছেন। যদিও আমরা বাস্তবে জানিনা যে, সংগঠিত মোট ঘটনার কয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গ্রেপ্তার বা বিচারের আওতায় এসেছে। তাই আরো ব্যাপকভাবে জনগণের হয়রানি ও প্রতারণা রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচিত জণপ্রতিনিধিদেরকে অবিলম্বে এই গ্রামীণ জনপদে জরুরী ব্যবস্থা নিতে হবে।।

বিষয়-২: আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও প্রশাসনের লোক সেজে হয়রানি ও প্রতারণা

সরকার গত মাসের ১৮ তারিখ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং এর ধারাবাহিকতায় ২৫ তারিখ থেকে সরকারী অফিস আদালতসহ বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সুস্থ মানুষকে সতর্কতা হিসেবে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিত করার প্রয়োজনে ও অসুস্থ মানুষকে আইসোলেশন ও হোম কোয়ারান্টাইনে বাধ্যতামূলক ভাবে রাখার জন্য রাস্তাঘাটে সেনাবাহিনী ও পুলিশ নামানো হয়। এই লকডাউনের কালে গণপরিবহন, জরুরী মেডিক্যাল ও দ্রব্যসামগ্রীর দোকান-পাট ছাড়া সব ধরনের বাজার- ঘাট বন্ধ থাকার সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি নতুন এক ধরনের উৎপাত শুরু হয়েছে বাংলাদেশে সেটা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনী বা প্রশাসনের লোক সেজে প্রতারণা শুরু হয়েছে।

এই ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে অনেক পত্রিকায়। ‘কুমিল্লার চান্দিনার তীরচর গ্রামে দোকান খোলার অপরাধে ভুয়া নারী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ও ৪ ভুয়া ডিবিপুলিশের প্রতারণা’ (দৈনিক কালের কন্ঠ, ২৮ মার্চ ২০২০); ‘চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের রহমতপুর গ্রামে পুলিশের এস.আই পরিচয়ে বাজারে দোকান খোলা রাখার অপরাধে পুলিশি অভিযান। দোকানিরা ভয়ে চলে গেলে ক্যাশবাক্স থেকে টাকা চুরি ও জনগণকর্তৃক ধৃত হয়ে দ্রুতবিচার আইনে মামলা’ (দৈনিক প্রথম আলো, ১ এপ্রিল ২০২০); ‘গাজীপুরের হোতাপাড়ার মনিপুর গ্রামে পুলিশের পোশাক ও সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণাকালীন সময়ে ৬ যুবক গ্রেপ্তার’ (সময়টিভি নিউজ)। এর বাইরেও বাড়িতে বিদেশ থেকে আসা লোকজন আছে কিন্তু কোয়ারেন্টিন মানছেন না কিংবা করোনা রোগী আছে এই বলে রাতের আধারে তল্লাশি চালানো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোচরে আনার কথা বলে বিভিন্নভাবে মানুষের সাথে প্রতারণার নতুন জাল বিস্তার হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাতের আধারে করোনা রোগী থাকার কথা বলে জামালপুরে তল্লাশি চালানোর কথা বলে কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শরীয়তপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল এবং সিলেটে বাসায় বিদেশফেরত করোনা রোগী থাকার মিথ্যা গুজব ছড়িয়েও ঘুষ চাওয়া কিংবা ভয়ভীতি দেখিয়ে সামাজিকভাবে হেনস্তার ঘটনা পত্রিকায় এসেছে।

সারাদেশে যেহেতু করোনা নিয়ে মানুষের একধরনের আতঙ্ক, ভয় ও আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে সংশয় জনক পরিস্থিতি আছে সেই সময়ে এই ধরনের সুযোগ-সন্ধানী অপরাধীগণ সক্রিয় হয়ে উঠছে। অপরাধবিজ্ঞানের ভাষায় ‘মৌসুমি’ ও ‘সুযোগসন্ধানী’ অপরাধী বলে চিহ্নিত করি। এই ধরনের অপরাধের বিস্তার নিয়ে অপরাধবিজ্ঞানী শেলী জে সিম্পসন এর মতামত দেখলেই বুঝতে পারবো, কেন এই সময়ে বিশেষ ধরনের অপরাধের সৃষ্টি হচ্ছে।

অপরাধবিজ্ঞানী শেলী জে সিম্পসন বলেন, ‘যখন অপরাধীরা বিশ্বাস করবে যে, তারা কোনভাবেই গ্রেপ্তার হবেন না বা তাদের ধরা পড়ার ভয় কম অথবা ধরা পড়েও যখন তারা মনে করবে তাদের শাস্তির মাত্রা ও পরিমান কম হবে, সেই সময়ে এই ধরনের অপরাধ বাড়বে।’ যদিও তিনি মূলত ভদ্রবেশি অপরাধের ক্ষেত্রে এই ধরনের ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন তবুও আমি মনে করি এখানে তা পুরোপুরিভাবে মিলে যায়।

বাস্তবে করোনা মহামারীর কালে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন লকডাউনের মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব কর্মসূচি নিশ্চিত করাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য কর্মসূচি, ত্রাণ কার্যক্রম ও অসুস্থ ও মৃতব্যক্তিদের সৎকার ও সহযোগিতামূলক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকায় অপরাধীদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা কমে গেছে। অন্যদিকে, সারাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচারবিভাগের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে এই অপরাধীরা ধারণা করে নিচ্ছেন যে, ধরা পড়লেও দীর্ঘমেয়াদী শাস্তির সম্ভাবনা একেবারেই কম। তাই এই সুযোগে সুযোগসন্ধানী অপরাধীগণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের লোক সেজে অপরাধের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে। এবং প্রক্রিয়াটি অপরাধের ইতিহাস বিবেচনায় স্বত:সিদ্ধ ধারণা।

আমি আগেও একটি লেখায় দেখিয়েছি যে, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে এই সময়ে পেশাদার অপরাধীদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুযোগসন্ধানী-মৌসুমি অপরাধীদের কার্যক্রমও বাড়বে। তাই অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যে ও স্থানীয় প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রকে আপদকালীন কার্যক্রমের পাশাপাশি তাদের মূল কাজে আরো মনোযোগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, সংবাদপত্র ও মিডিয়া সমন্বিত কাজ করলে এই ধরনের অপরাধের হার কমানো সম্ভব বলে মনে করি।

বিষয়-৩: পণ্যের বিজ্ঞাপনের মোড়ক, ভূয়া অফার ও ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার মাধ্যমে হয়রানি ও প্রতারণা

করোনা মহামারীর কালে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান লোভনীয় অফার দিয়ে মানুষের সাথে সেবা দেয়ার নাম নিয়ে প্রতারণা করছে বলে আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি। বিশেষ করে করোনার জন্য জরুরি নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ফেস মাস্ক ও ব্যাক্তিগত সুরক্ষা পোশাক নিয়ে দেশে বিদেশে প্রচুর প্রতারণা ঘটনা আলোচনায় এসেছে। করোনা সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকরী সার্জিক্যাল মাস্ক ‘এন-৯৫’ মডেল নাম দিয়ে মাস্ক বিক্রির কথা বলা হলেও বাস্তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য কোড অনুযায়ী ঠিক ‘এন-৯৫’ মডেলের মাস্ক নয়।

অপরদিকে, চিকিৎসা বিধি অনুযায়ী পিপিই হওয়ার কথা থাকলেও পলিথিন বা প্লাস্টিক দিয়ে রেইনকোর্ট অথবা শুধুমাত্র কটন কাপড় দিয়েও তা তৈরি করে বিক্রির করার অভিনব খবর পাওয়া যাচ্ছে। টাইম্স অব ইন্ডিয়ার বরাত দিয়ে দৈনিক প্রথম আলো গত ২৫ মার্চ ২০২০ সালে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল পুলিশ সংগঠন ইন্টারপোল জরুরী সতর্কবার্তা প্রেরণ করেছেন বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে সতর্কতার অবলম্বনের জন্য। তারা বলেছে, ভুয়া দোকান, ইন্টারনেট সাইট, সামাজিক মাধ্যমে ই-পেজ ও ইমেইলের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সহজ এই প্রতারণা ব্যবসা চালু করা হয়েছে। এর কারনে ইন্টারপোল এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংঘটিত ৩১টি ঘটনায় জালিয়াতি জন্য ১৮টি ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করার পাশাপাশি ৭ লাখ ৩০ হাজার ডালার উদ্ধার করেছে। তাই ইন্টারপোল ১৯৪টি দেশে এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘পার্পল নোটিশ’ জারি করেছে।

আমাদের দেশে অনেকক্ষেত্রে অনলাইনে বিভিন্ন অফার ও সুবিধা দিয়ে পণ্য বিক্রির কথা বলেও আগাম টাকা নিয়েও মালামাল পরিশোধ করা হচ্ছে না। অনলাইন বিক্রয় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালীর নামেও এই ধরনের প্রতারণার কথা দি ডেইলি বাংলাদেশ নামে একটি পত্রিকায় এসেছে। আমার এক পরিচিত কলিগ একটি অনলাইন বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বলেছেন যে, স্বাভাবিক সময়ে কমদামে মাস্ক দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে হঠাৎ করে মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে পরবর্তীতে আগাম টাকা নিয়েও অর্ডার বাতিল করা হয়েছে ।

যদিও আমি মনে করি পত্রিকার পাতায় আসা সংবাদগুলোর ধরণ-প্রকৃতি হয়তো সামগ্রিকভাবে সংগঠিত মোট প্রতারণা-হয়রানির একটি অংশকে মাত্র প্রতিনিধিত্ব করে। বাস্তবে আমরা জানি যে, মোট সংগঠিত অপরাধের মাত্র ছোট্ট একটা অংশই মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিপোর্ট হয় অথবা সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত হয়। আর্থিক অপরাধের অনেক অংশই ভুক্তভোগীগণ পরবর্তীতে হয়রানির জন্য পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেন না যাকে আমরা অপরাধবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ডার্কফিগার’ হিসেবে চিহ্নিত করি। এই ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে প্রতি ১০টি ঘটনার মধ্যে মাত্র ১টি অপরাধ মানুষের প্রকাশিত হয়।

আমি মনে করি, প্রকৃত সংখ্যা যাই হোক করোনা মহামারীর কালে বিভিন্নমুখী গুজব ছড়িয়ে, অফার-সুবিধা দেওয়ার কথা বলে কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা প্রশাসনের লোক সেজে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা ফাঁদ ও জাল বিস্তার করে সুবিধা আদায় করতে অনেক মৌসুমি ও সুযোগসন্ধানী অপরাধীই ব্যাস্ত থাকতে পারেন কিন্তু আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

সরকার, রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করতে হবে তবেই সারাদেশ জুড়ে বিস্তৃত ও সর্বব্যাপী এই ফাঁদ থেকে আমরা মুক্তি পাব।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

I Screen Ami k Tumi
Labaid
Bellow Post-Green View