জীবনকে নানাভাবে উপলব্ধি করার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে মহামারী হয়ে দেখা দেয়া ‘করোনা’ ভাইরাস। তাই করোনার এই ক্রান্তিকালে অনেকেই ধর্মীয় উপলব্ধি দিয়ে জীবনের সমীকরণটা মিলিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই বৈজ্ঞানিক কিংবা পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় বুঁদ হয়ে এই বিপদে বেঁচে থাকার প্রেরণাটুকু খুঁজছেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে করোনার ভয়ে মানুষ হয়েছে ঘরবন্দী। তবে এই ঘরবন্দী অবস্থা প্রথম কয়েকদিন ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আমাদের অনেকের মধ্যে একপ্রকারের অস্বস্তি বা বিরক্তি কাজ করতে শুরু করলো।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘরবন্দী মনের অনুভুতি প্রকাশ করতে শুরু করলেন। কেউ কেউ লিখলেন, ‘এভাবে আর কত দিন? অস্থির লাগছে।’ আবার অনেকে লিখছেন, ‘শরীরটা জং ধরে যাচ্ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। ঘরে থেকে দম বন্ধ হয়ে আসছে।’ এছাড়া কিছু তরুণ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যেদিন এই বন্দীদশার শেষ হবে সেদিন বাইরে বের হয়ে হুররে বলে একটা দৌঁড় দিব।’
করোনা কেন্দ্রিক এ ধরনের অনুভুতি আসলে ঘরবন্দী মানুষের মানসিক চাপেরই বহিঃপ্রকাশ, যা মাঝে মাঝে শারীরকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। তখন অসার হচ্ছে শরীর। তবে ঘরবন্দী এই সময়ে আমি-আপনি কিন্ত নানা ধরনের পারিপার্শ্বিক সুযোগ পাচ্ছি। হ্যাঁ, আমারা অনেকেই পরিবারের সাথে একত্রে থাকতে পারছি, পছন্দের খাবার খেতে পারছি। এছাড়া টেলিভিশন ও মোবাইল ফোনে বিনোদনের খোরাক মিটাতে পারছি। সেই সাথে আমরা চুড়ান্তভাবে এটা বিশ্বাস করছি যে, থমকে থাকা করোনার এইসব দিন শেষ হবে একদিন। সেদিন আমরা আবার মুক্ত আর ব্যস্ত জীবনের সারথি হবো।
কিন্তু এবার একবার ভাবুনতো, অপরাধ পরবর্তি কোনো এক কারাবন্দী জীবনের কথা। যে জীবনে একবারের জন্য আকাশ দেখার সুযোগ নেই। প্রিয় বাবা-মা কিংবা স্ত্রী-সন্তানকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ নেই। দণ্ডিত সে জীবনে নেই তথ্য প্রবাহ কিংবা বিনোদনের উন্মুক্ত কোনো সুবিধা। এমনকি মন চাইলেই পাওয়া যাবে না মনের মত পছন্দের ঘরোয়া খাবার। এছাড়া সেখানকার কষ্টকর বাসস্থান আর পারিপার্শ্বিক সিমাবদ্ধতা তো আছেই। সর্বোপরি এক অন্তহীন নির্বাক নিষঙ্গতা, যা বাইরের থেকে কারো পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব। আর অপরাধের শাস্তিটি যদি হয় আমৃত্যু কারাদণ্ড, সেক্ষেত্রে অপরাধীর জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটা নিতে হবে ওই কারাগারেই।
তাই করোনা কেন্দ্রিক এই সাময়িক ঘরবন্দী বাস্তবতায় ভিন্নদৃষ্টি দিয়ে হলেও একবার উপলব্ধি করুন কারাবন্দী জীবনের দুর্বিষহ এক বাস্তবতাকে। আর সে বোধ থেকেই প্রতিনিয়ত অপরাধকে ‘না’ বলুন। দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলুন।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)