
মাঠে লড়ছেন শামীমা-জ্যোতি। মিরপুরের গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন তাদের স্বজন। এমন মুহূর্তের জন্য ১১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের। অবশেষে মিটল তাদের আক্ষেপ। একদশক পর মিরপুরে মেয়েদের ম্যাচ হওয়ায় খেলোয়াড়দের পরিবারের সদস্যরা কাছ থেকে দেখলেন ২২ গজের লড়াই। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রথমবার ভারতকে হারিয়ে উৎসব আরও রঙিন করল টিম টাইগ্রেস।
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের স্পিনিং উইকেটে বধ হল হারমানপ্রীত কৌর-স্মৃতি মান্দানাদের শক্তিশালী ভারত। ৫ বছর পর দলটির বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে এলো জয়। তারপরও টাইগ্রেস ক্রিকেটারদের উদযাপন হল না বাঁধনহারা। সম্ভবত নিজেদের গুটিয়ে রাখলেন সিরিজের আগের ম্যাচেই জয়ের মোক্ষম সুযোগ হারানোর আক্ষেপে।
৪ উইকেটের জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। ৮ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবার মিরপুরে খেললেন তিনি। ড্রেসিংরুম লাগোয়া গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে দর্শকদের ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ আওয়াজ ছুঁয়ে গেছে দলকে।
‘শুধু আমার পরিবার না, সবার পরিবারের একটা আক্ষেপ ছিল যে মিরপুরের মাঠে কেনো খেলা হয় না। ছেলেদের খেলা যখন হয়, টিভিতে দেখে বা গ্যালারিতে বসে দেখে। বাংলাদেশের হয়ে খেলছি অনেকদিন ধরে, এ মাঠে খেলা হয় না। আমার নিজেরও যেমন আক্ষেপ ছিল, পরিবারেরও ছিল। কারণ এটা একটা স্পেশাল গ্রাউন্ড। আর এখানে অনেকদিন পর আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি, যেটা দলের জন্য অনেক বড় অর্জন। পরবর্তীতে যেন আমরা এখানে আরও ম্যাচ খেলতে পারি সেটার জন্যও একটা ভালো সাইন এই জয়।’

বড় দলের বিপক্ষে ছেলেদের সিরিজ হলে গ্যালারি থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। মেয়েদের ম্যাচে দর্শক হয়েছে পাঁচশর মতো। তাতেও খুশি বাংলাদেশ অধিনায়ক। দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি। ওয়ানডে সিরিজে আরও দর্শক আশা করছেন জ্যোতি। মনে করেন প্রচার বাড়লে দর্শক আরও বাড়বে ভবিষ্যতে।
‘এটা আসলে মিডিয়ার উপর নির্ভর করছে। যত আমাদের নিউজ চারিদিকে ছড়াবে ততো মানুষ জানতে পারবে। মেয়েদের ক্রিকেট অনেকেই অনুসরণ করে। বাংলাদেশের মাটিতে আমরা খেলছি, দর্শকদের অবশ্যই আবেদন জানাব যেন তারা আরও আসে। মাঠে দর্শকদের ইতিবাচক সমর্থন পাওয়া যায়। যখন ব্যাটিং করছিলাম সবার একটা বিশ্বাস ছিল। মাঠ থেকে যখন বাংলাদেশ বাংলাদেশ শুনতে পাই, ভেতর থেকে অন্যরকম একটা পজিটিভিটি কাজ করে। মনে হয় যে দেশের জন্য খেলছি, দেশের জন্য আরেকটু লড়াই করি। শক্তিটা অন্যরকম থাকে। দর্শক আরও আসলে আরও ভালো লাগবে। যারাই এসেছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ফ্যামিলি বলেন, ফ্যান বলেন, তারা কষ্ট করে আসছেন, খেলা দেখছেন, সমর্থন দিচ্ছেন, তাদেরকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ওনাদের সাপোর্টেই আমরা এতদূর।’
অতৃপ্তি ঘোচার সিরিজে আক্ষেপও আছে কিছুটা। সিরিজের সম্প্রচার স্বত্ব কেনেনি কোনো টিভি চ্যানেল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ইউটিউব চ্যানেলই খেলা দেখার একমাত্র মাধ্যম। সিরিজে নেই কোনো পৃষ্ঠপোষকও। যে কারণে গ্রাউন্ডেও দেখা যায়নি কোনো ব্র্যান্ডিং। মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিন পর্যন্ত সচল রাখা হয়নি। আন্তর্জাতিক সিরিজে হোম অব ক্রিকেটে অ্যানালগ স্কোরকার্ড বড্ড বেমানান লাগছিল।
স্পিন শক্তি দিয়ে ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের সবকটি উইকেটই পড়েছে স্পিনে। একাধিক লেগ স্পিনার, বাঁহাতি স্পিনার, অফস্পিনারের সমন্বয় টাইগ্রেস বোলিং লাইনআপে। মিরপুরের মন্থর উইকেটের জন্য যা আদর্শ। ক্রিকেটাররা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে আবেদন করেছিলেন মিরপুরকে সিরিজের ভেন্যু করার জন্য। বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে করেন ভারত-বধের পর বিসিবি তাদের আরও সুযোগ দেবে এখানে খেলার।