লক্ষ্মীপুরে চাঞ্চল্যকর স্বামী-স্ত্রী হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। টাকা ও স্বর্ণালংকারের লোভেই এ জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকার লোভে ব্যবসায়ী আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও তার সহধর্মীনী আতরেন নেছাকে (৬৫) হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
একটি অডিও কল রেকর্ডের সূত্র ধরে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল আলম চৌধুরী ও সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছে, কামরুল হাসান, রুবেল, জুয়েল, কাউছার হোসেন, আবুল কাশেম খোকন ওরফে দুদু মিয়া ও বাহার। এরমধ্যে বাহার মাদক মামলায় কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের কাচারিবাড়ি এলাকায় গ্রেফতার হাসানের ইলেক্ট্রিকের দোকান রয়েছে। তিনি নিজেও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। জুয়েল, বাহার, রুবেল ও কাউছার তার বন্ধু। তারা একসঙ্গেই শাকচর গ্রামের ছইমিঝি বাড়িতে আড্ডা দিতেন। ওই বাড়ির সামনেই একটি একতলা পাকাভবনে আবু ছিদ্দিক ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছা বসবাস করতেন। একমাত্র পালক ছেলে আলমগীর তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।এদিকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে দুদু মিয়া তাদের বাসা থেকে টাকা-স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করেন। এটি তিনি হাসান ও তার বন্ধুদের জানান। ঘটনার কিছুদিন আগেই আবু ছিদ্দিক জমি বিক্রি করেন। দুদু মিয়া সেই তথ্যও তাদের কাছে উপস্থাপন করেন। এরপর অন্যদের না জানিয়েই হাসান, রুবেল ও বাহার রাতের অন্ধকারে জানালার গ্রিল বেয়ে ছিদ্দিকের বাসার ছাদে ওঠেন। এক পর্যায়ে ছাদের দরজার তালা ভেঙে তারা বাসায় ঢোকেন। তখন হাসানের সঙ্গে দুদু মিয়ার কথা হয় মোবাইল ফোনে। এরপরই ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর হাত-মুখ বেঁধে খাটে ফেলে রাখেন। এতে ধস্তাধস্তিতে খাট ভেঙে যায়। পরে তারা আলমিরা ভেঙে কিছু না পেয়ে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন কোথায় কী আছে? কিন্তু বৃদ্ধ দম্পতির সাড়া শব্দ ছিল না। এতে হাসানসহ তার বন্ধুরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
ঘটনাটি নিয়ে পরদিন আলোচনা করলে হাসানসহ তার বন্ধুদের দুদু মিয়া চুপ থাকার পরামর্শ দেন। দুই দিন পর সদর মডেল থানা পুলিশ
গত বছরের ১৮ অক্টোবর রাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে ছিদ্দিক ও তার স্ত্রীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে।এরপরই তারা আত্মগোপনে চলে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী জুয়েল ও কাউছারও টাকার ভাগ চান। এনিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। সেই ঘটনার একটি কল রেকর্ড পুলিশের হাতে আসে।দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৯ জানুয়ারি মধ্যরাতে হাসানকে জেলা শহরের মাদাম ব্রিজ এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে হাসান আদালতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। পরে জুয়েল, কাউছার, রুবেল ও দুদু মিয়াকে আটক করা হয়। তাদেরকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বিকেলে লক্ষ্মীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন জানান, সম্প্রতি একটি মাদক মামলায় বাহার কক্সবাজারে গ্রেফতার হন। বাহার এখন কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। সেখান থেকে আবেদনের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর আনার প্রস্তুতি চলছে। আদালতে তার বিরুদ্ধে রিমান্ড প্রার্থনা করা হবে। গত বছরের ১৮ অক্টোবর সদর উপজেলার শাকচর গ্রামে মধ্যরাতে তালাবদ্ধ ঘর থেকে অর্ধগলিত আবু ছিদ্দিক ও তার স্ত্রী আতেরুন নেছা স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত আবু ছিদ্দিকের ভাই খোকন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।