চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঢাবি অধ্যাপক রিয়াজের বহিষ্কারে আইএসএস’র উদ্বেগ

শ্রেণিকক্ষে ‘অশ্লীল চিত্র’ প্রদর্শনের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজুল হককে সাময়িক বহিষ্কারের ব্যাপারে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে চিঠি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশাল স্টাডিজ (আইএসএস)। ইনস্টিটিউটটির শিক্ষা বিষয়ক ডেপুটি রেক্টর ড. ফ্রিক বি শিফোর্স্ট স্বাক্ষরিত এ  চিঠিতে এ অধ্যাপকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশা প্রকাশ করা হয়েছে।  গত ২০ মার্চ ইমেইল ও ডাকযোগে উপাচার্যকে এ চিঠি পাঠানো হয়। অধ্যাপক রিয়াজ যে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী।

চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে সচেতন এমন একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হবে এবং তার (অধ্যাপক রিয়াজের) পাঠদানের সময় জেন্ডার বিষয়টির জটিলতা উপস্থাপনের জন্য তাকে শাস্তি দেওয়া হবে না।’

যদিও গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি এখনও কাজ শুরু করেনি বলে দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

জেন্ডার ইস্যুকে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি শিক্ষাদান নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন ওঠে এবং বিতর্ক সৃষ্টি হয় যা স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা বিশ্বাস করি যে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টিকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং জটিল এ বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।’

বিগত কয়েক বছর যাবত আইএসএস’র ‘ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ প্রোগ্রামের আওতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

ইনস্টিডিউটের ২০০৫-৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অধ্যাপক রিয়াজকে ‘আন্তরিক এবং খোলা মনের, দায়িত্বশীল এবং জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী’ হিসেবে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাপী নারীদের প্রতি অবিচারের ব্যাপারে সে অত্যন্ত সমালোচনামূলক।’

এ চিঠির ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘অধ্যাপক রিয়াজুল হকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী অবশ্যই স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হবে। এ জন্য তদন্ত কমিটিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

‘কমিটি অভিযোগের ব্যাপারটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথা বলবে। সবদিক বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে সিন্ডিকেট। কারও বিরুদ্ধে অবিচার করার সুযোগ নেই’ বলেন ঢাবি উপাচার্য।

অধ্যাপক রিয়াজের বিষয়টি নিয়ে আইএসএস’র সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করেন তিনি।

আইনি নোটিশের জবাব দেয়নি ঢাবি কর্তৃপক্ষ

গত ২৮ মার্চ অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উকিল নোটিশ পাঠান ড. রিয়াজুল হক। উকিল নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের নেওয়া এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনোভাবেই ড. রিয়াজুল হককে লিখিতভাবে সচেতন করা হয়নি বা আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তার ন্যায়বিচার চেয়ে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের দেওয়া বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া বা পুনর্বিবেচনারও কথা বলা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই উকিল নোটিশের জবাব দিতে বলা হলেও ১ এপ্রিল পর্যন্ত নোটিশের কোন জবাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেয়নি বলে চ্যানেল আই অনলাইনকে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।  পরবর্তী আইনী পদক্ষেপের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শ্রেণিকক্ষে একটি প্রফেশনাল ব্যাচে জেন্ডার বিষয়ক একটি কোর্সে ‘আপত্তিকর চিত্র’ ব্যবহারের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এ অধ্যাপককে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।