বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৩০তম স্থানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ঘোষণা করেছে বিশ্বখ্যাত ফোবর্স ম্যাগাজিন । তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ফোর্বস ম্যাগাজিন যে মানদণ্ডেই তালিকা তৈরী করুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করা অন্যতম আলোচিত, প্রশংসিত এবং সফল একজন নারী।
বিশেষজ্ঞরা এটাও বলেছেন, জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি একদিকে যেমন অ্যাঙ্গেলা মরকেলের মতো বিশ্বের অন্যতম মানবিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছেন, তেমনি সবদিক দিয়েই নোবেল বিজয়ী সু চিকেও ছাড়িয়ে গেছেন।
শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত সু চি যখন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক ধরনের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন, শেখ হাসিনা তখন সকল সমীকরণের উর্ধ্বে গিয়ে নির্দ্বিধায় মানবিকতার পরিচয় দিয়ে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। এমনকি দেশের অর্থনীতির চেয়েও মানবিকতাই শেখ হাসিনার কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেজন্য ফোর্বস ম্যাগাজিনের রেটিং যা-ই বলুক না কেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতৃত্বের সামনের সারির এক রাষ্ট্রনায়ক, বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর নারীদের অন্যতম শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. শান্তনু মজুমদার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের কিছু মানদণ্ডের ভিত্তিতে ক্ষমতাধর নারীর তালিকা তৈরা করে। কিন্তু সে ফেলাফল যা-ই হোক না কেন আমি মনে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল-মত নির্বিশেষে সবার উর্ধ্বে বিশেষভাবে ধন্যবাদের যোগ্য।
সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের প্রশংসা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন সারাবিশ্বে তা অতুলনীয়। নোবেল পাওয়া সু চি যেখানে সামরিক বাহিনীর ভয়ে টুঁ শব্দটি করলেন না, সেখানে শেখ হাসিনা সকল জটিল সমীকরণ ও আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক বিষয় বিবেচনা না করে সবার উপর মানবিকতাকে স্থান দিয়েছেন।
সেদিক থেকে আন্তর্জাতিক মহলে তাকে নিয়ে যে অালোচনা হচ্ছে, তার যে প্রশংসা হচ্ছে সেটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষক।
‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে, তাদের থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা করে তিনি যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তা ধন্যবাদের যোগ্য। প্রথম দু’একদিন কিছুটা দ্বিধা কাজ করলেও পুরো বিষয়টার জন্য তিনি অনেক প্রশংসার দাবীদার,’ বলে মন্তব্য করেন শান্তনু মজুমদার।
ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায, ক্ষমতার নিরিখে সারা বিশ্বের নারীদের মধ্যে ৩০তম স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের চেয়ে ছয় ধাপ এগিয়ে এই অবস্থানে এসেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ম্যাগাজিনটি প্রতি বছর ক্ষমতাধর নারীদের তালিকা প্রকাশ করে। শেখ হাসিনা গত বছর ৩৬তম এবং ২০১৫ সালে ৫৯তম অবস্থানে ছিলেন।
এবার ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় এক নম্বরে রয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম
রকেল। এর পরের স্থানে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে শেখ হাসিনাকে ‘লেডি অব ঢাকা’ আখ্যায়িত করে অং সান সু চি’র সঙ্গে তার পার্থক্য দেখিয়ে ফোর্বস লিখেছে, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তিনি শুধু সহায়তার প্রতিশ্রুতিই দেননি, তাদের প্রতিটি সকাল শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত সহায়তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
রোহিঙ্গাদের জন্য শেখ হাসিনা যে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছেন সেটাও উঠে এসেছে ফোর্বসের প্রতিবেদনে।
ফোর্বসের তালিকায় এবার ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৩৩ নম্বরে রয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। গত বছর তিনি ২৬ নম্বর স্থানে ছিলেন। তার অবস্থান নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের পরও নীরব ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হেয়েছে।