কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক তারই এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে ৬৯ জন ছাত্র-শিক্ষকের ফেসবুকের একটি ‘ক্লোজ গ্রুপে’ মন্তব্য করার অভিযোগে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ‘বিতর্কিত’ ৫৭ ধারায় মামলা করে আলোচনায় এসেছিলেন। তুচ্ছ ওই ঘটনা বিভাগীয় পর্যায়ে বা সহকর্মীদের চায়ের টেবিলেই সমাধান করা যেতো বলে অনেকে মত দিলেও ঘটনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা পেরিয়ে সারাদেশে আলোড়ন তৈরি করেছিল। আজ বরিশালে আরেকটি মামলার ঘটনা গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে আলোড়ন তৈরি করেছে। গাজী তারেক সালমান বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকাকালে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায় পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া একজন শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন। শিশুর রঙ তুলিতে আঁকা বঙ্গবন্ধুর ওই ছবিকে ‘বিকৃত’ বলে মনে করেছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ সাজু। ২৬ মার্চ ওই আমন্ত্রণপত্র ছাপা হলেও আইনজীবী সাজু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃতি ও অবমাননা করা হয়েছে এমন অভিযোগে ৭ জুন মামলা করেন। মামলায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেন, আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সকালে কারাগারে পাঠানোর পর বিকেলেই জামিনে মুক্ত হন গাজী তারেক সালমান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৫৭ ধারাতে মামলার ঘটনা বেড়েছে, যা আগে মানহানির মামলা আকারে দেখা যেত। জামিন অযোগ্য ও দ্রুত বিচারের সুবিধার অপপ্রয়োগ করে ৫৭ ধারা বা মানহানির মামলাগুলোতে প্রকৃত ভুক্তভোগির চেয়ে আন্ত:কোন্দল ও ক্ষমতা প্রদর্শনের মহড়া হিসেবে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। সমাজের ও রাষ্ট্রের অপতৎপরতা বন্ধ করতে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে যে আইন, তা অপব্যবহার করে আর্থিক ও সামাজিকভাবে হয়রানির ঘটনায় আমরা শঙ্কিত। আইন ও আদালত তাদের নিজস্ব গতিতে চলে, আর দেশের জনগণ নিজের নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে আইনের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তবে আমাদের আশাবাদ সেই আইন যেন কারো হয়রানি ও ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার না হয়।