১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বসন্ত ঋতুর আলো ঝলমলে দিনের পর তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় নেমে এসেছিলো বিভীষিকাময় রাত। বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে এই রাতে কীভাবে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর মানব ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যায় মেতে উঠেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানি সামরিক জান্তার হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বাধীনতাকামী বাঙালি ব্যালটের মাধ্যমে ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। ফলে পাকিস্তানের দুই যুগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা। ঘটনা পরিক্রমায় সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাঙালিদের হাতে পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা অর্পণ ঠেকাতে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন ও বাঙালিদের দমন করতে তারা কৌশলী ভূমিকা নেয়। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার আড়ালে সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেন। নির্দেশ মোতাবেক ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজধানী ঢাকায় মেশিনগান, কামান, রাইফেল, মর্টার নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসহ রাজধানীর অনেক জায়গায় তারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই কাল রাতেই পাকিস্তানি ঘাতক সেনাদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার অকুতোভয় বীর সন্তানরা প্রাণের মায়া তুচ্ছ করে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসে বাঙালির চিরকাঙ্খিত স্বাধীনতা। গত ১১ মার্চ বাংলাদেশের সংসদে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এজন্য জাতীয় সংসদকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পাকিস্তানিরা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে জড়িত সৈন্যদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ৪ যুগেও তা বাস্তবায়ন করেনি। ১৯৭১ সালের মতোই বর্বর পাকিস্তানিরা এখনো নিজেদের বর্বরতাকেই ধারণ করে চলছে। নিজেদের অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার মানসিকতাও তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন আন্তর্জাতিকভাবে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং পাকিস্তানি গণহত্যার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে দিনটিকে জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সরকারকে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে স্বাধীনতাকামী বাঙালির রক্তেভেজা ২৫ মার্চের এই তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষণে নিহত সকল শহীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।