২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নে ১১টি স্থানে ষড়যন্ত্রমূলক সভা হয়।
বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ১৭তম দিনের মতো যুক্তিতর্কে এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি এ মামলার ২৫ আসামীকে সম্পৃক্ত করে আদালতে সাক্ষ্য দেন। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষি (পিডব্লিউ-৬৫) ডিজিএফআই-এর তৎকালীন ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি, (পিডব্লিউ-৬৬) এনএসআই’র মাঠকমকর্তা ইউসুফ হোসেন, (পিডব্লিউ-৬৭) তৎকালীন অতিরিক্ত ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূইয়া, (পিডব্লিউ-৬৮) লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান (এক্সিকিউটিভ), (পিডব্লিউ-৬৯) পুলিশের নায়েক মো. হাবিবুর রহমান, (পিডব্লিউ-৭০) পুলিশ সদস্য মো. আল-মামুন, (পিডব্লিউ-৭১) পুলিশ সদস্য মো. আহসান হাবিব, (পিডব্লিউ-৭২) মেজর (অব.) আতিকুর রহমানের দেয়া সাক্ষ্যের আলোকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
এ সাক্ষীর জবানবন্দীর আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ উল্লেখিত আসামীদের অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, ভয়াবহ ওই হামলার আলামত নষ্ট এবং অপরাধীদের বাঁচাতে বিভিন্ন তৎপরতার বিষয় তুলে ধরেন।
সাক্ষী সাদিক হাসান রুমি তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর বিভিন্ন কর্মকান্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করলে তাকে বদলি করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে জানায়, রেজ্জাকুলকে বদলি করলেও তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ২১ আগস্ট হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার যুক্তি সাক্ষী ইউসুফ হোসেনের জবানবন্দির আলোকে রাষ্ট্রপক্ষ ২১ আগস্ট হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাওয়া ভবনে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক এবং পরিকল্পনাকারীদের অপরাধের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে।
যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গিদের (মামলার আসামী) সঙ্গে তৎকালীন সরকার ও প্রশাসনের যে সকল ব্যক্তিবর্গ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের বিষয়ে উল্লেখিত সাক্ষীদের জবানবন্দির আলোকে আজ যুক্তি পেশ করেন।
আতিকুর রহমানের দেয়া সাক্ষ্যের আলোকে যুক্তি উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় মামলায় আজকের কার্যক্রম মুলতবী করা হয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। মামলার কার্যক্রম আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, আগামী ১১, ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম যথারীতি চলবে।
অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।
২১ আগষ্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছে। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে.কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। এছাড়া ৩ জন আসামী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুফতি হান্নান ও শরীফ সাইদুল আলম বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পলাতক আসামীদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী রয়েছেন।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।