চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

যেভাবে হাওয়া ভবনে হয়েছিল ষড়যন্ত্র

আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার অন্যতম প্রকাশ ছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভয়ঙ্কর সে হামলায় নেতৃত্ব দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বহুল আলোচিত ‘হাওয়া ভবনে’ বসে হামলার পরিকল্পনা হয়েছিল।

বীভৎস গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, আদলতে একাধিক সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং আসামিদের জবানবন্দীতে এসব কথা উঠে আসে।

সাক্ষীদের জবানবন্দি ও আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সহায়তায় ২০০৩ সালে কাশ্মীরভিত্তিক সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের নেতা আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে ইউসুফ ভাট ও তেহরিক-ই-জিহাদিল ইসলামী (টিজেআই) নেতা মুজ্জাফর শাহ বাংলাদেশে আসে এবং জঙ্গি তৎপরতা চালানোর জন্য পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড ও গুলি আনে।

সে সময় আবদুস সালাম, মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান, মাওলানা আবদুর রউফ ও আবদুল মাজেদ ভাট মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদে একত্র হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, জঙ্গি তৎপরতা চালানোর ‘প্রধান বাধা’ আওয়ামী লীগ বিশেষ করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করা গেলে তাদের কর্মকাণ্ড চালানোর পথ সুগম হবে। তখন বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায় এ আক্রমণ চালানো সহজ হবে বলেও তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।

এরপর তারা কুমিল্লার মুরাদনগরের এমপি মোফাজ্জল হোসেইন কায়কোবাদের সহযোগিতায় ২০০৪ সালের প্রথমদিকে ঢাকার বনানীতে ‘হাওয়া ভবনে’ গিয়ে তারেক রহমান ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যাসহ জঙ্গি কার্যক্রম চালানোর জন্য তারা সহযোগিতা চায়। তারেক রহমান তাদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়েছে, মুফতি হান্নান তার বাড্ডার অফিস, মোহাম্মদপুর ও অন্যান্য জায়গায় সহযোগীদের নিয়ে সভা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আবারও তারা তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এনএসআইর তৎকালীন মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আবদুর রহিম, সিআইডির তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার (পরে মেজর জেনারেল) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে সভা করে। তারেক রহমান উপস্থিত সবার সামনে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আশ্বাস অনুযায়ী মুফতি হান্নান ও তার অন্য সহযোগীরা মোহাম্মদপুর, বাড্ডাসহ বিভিন্ন জায়গায় আবারও সভা করে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নেয়।

এরপর ২০ আগস্ট মুফতি হান্নানের সহযোগী আহসান উল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন আবু জান্দাল, আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির বাসা থেকে মাওলানা তাজউদ্দিনের সরবরাহ করা ১৫টি গ্রেনেড পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় কাজলের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মুফতি হান্নান মুন্সীসহ হরকাতুল জিহাদের সদস্যরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড আক্রমণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

২১ আগস্ট কাজলের বাসা থেকে সবশেষ প্রস্তুতি নিয়ে মুফতি হান্নান, আবদুল মান্নান ও ডা. জাফরের নির্দেশনা এবং তত্ত্বাবধানে জঙ্গিরা কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাস্থলে যায় ও প্রাণঘাতী আক্রমণ চালায়।