১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ। যশোর টাউন হল মাঠে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিন। তখন গভীর রাত। হাজারো জনতা ও সংস্কৃতিকর্মী বাংলার আবহমান সংস্কৃতির ধারক বাউল গানের সুর মূর্ছনায় বিমোহিত। ঠিক তখনই বিকট শব্দে দুই দফা বিস্ফোরণ।
নিরাপত্তার ফাঁকফোকরে মঞ্চের নিচে আগে থেকেই বোমাগুলো পেতে রাখা হয়েছিল।
নৃশংস ওই হামলায় প্রাণ হারান নূর ইসলাম, সন্ধ্যা রানী, রামকৃষ্ণ, তপন ও বাবুল সূত্রধরসহ অন্তত ১০ জন শিল্পী-সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ মানুষ। আহত হন দেড় শতাধিক।
ভয়ঙ্কর ওই বোমা হামলার দেড় যুগ পূর্তি সোমবার। তার আগের দিন উদীচীর প্রচার ও তথ্য বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৌলবাদী অপশক্তির ঘৃণ্য হামলার শিকার অনেক সংস্কৃতি কর্মী এখনও পঙ্গুত্ব নিয়ে জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার সেটাই ছিল শুরু। এরপর এরকম অনেক হামলা প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ।
উদীচীর বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই একটি অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মভিত্তিক-রাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। আর, তাই উদীচীর উপরই নেমে আসে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরণের সর্বপ্রথম হামলা। এরপর একে একে চালানো হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, ধর্মীয় উপসানালয়, আদালত, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন জায়গায়।
‘যশোর হত্যাকাণ্ডের পর সরকার কয়েকটি উগ্র ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ও আইনের আওতায় আনলেও এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে এসব সংগঠনের গডফাদার জামায়াত-শিবির গোষ্ঠী। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে তাদেরকে বহাল তবিয়তে রেখে নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকার দেয়ায় বারবারই মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশের সাধারণ মানুষের উপর।
তাই, জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছে উদীচী।