চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

১৭ জুলাই…

লোপা হোসেইন। সংবাদ উপস্থাপক। গান করেন। আবৃত্তি করেন। লেখালেখি করেন। গতকাল ১৭ জুলাই তিনি ​সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—

২ বছর আগের কথা । ২০১৫ সালে মুক্তি পায় শিহাব শাহীন ভাইয়ার বহুল আলোচিত চলচ্চিত্র ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ । আমি তখন এক অন্য আমি । একাকীত্ব,হতাশা,সমগ্র পুরুষ জাতির প্রতি ঘৃণা আর বিরক্তিতে বিষিয়ে ওঠা মন নিয়ে ঝিমিয়ে পড়া এক আমি । এই আমাকে আমার মাতৃসম শিক্ষক সাবরিনা সলতানা চৌধুরী কিছুটা সময় আনন্দে রাখার নিমিত্তে নিয়ে গেলেন সিনেপ্লেক্সে,আমরা দেখলাম ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ নামের হৃদয় ছোঁয়া এক প্রেমের সিনেমা । যে সিনেমার গানগুলো ছিল অসম্ভব সুন্দর । বেশির ভাগ গানই টিভিতে বা ইউটিউবে দেখা হয়েছে সিনেমা দেখার আগেই । তাই কোন গান কে গেয়েছে,লিখেছে,সুর দিয়েছে,তা আগেই জানা । অথচ সিনেমা দেখার পর যে গানটা সবচেয়ে বেশী মন ছুঁয়ে গেল,সেই গানটির স্রষ্টা আর গায়ক সম্পর্কে কোন হদিস পেলাম না । এমনকি এই গানটির কোন প্রচারও হয়নি সেভাবে । বাড়ি ফিরেই অনুসন্ধানে নেমে পড়লাম “ছুঁয়ে দিলাম” গানটির স্রষ্টার এবং গায়কের । পেয়েও গেলাম । দেখলাম,এই গানের গায়ক নির্জ হাবিব নামের এক যাদুকরী কন্ঠের নবীন গায়ক । আর গানটি লিখেছেন এবং সুর দিয়েছেন সিরাজুম মুনির নামের এক ভদ্রলোক । ফেসবুকে গিয়ে দেখি গোবেচারা টাইপ চেহারার এই ভদ্রলোক কাপড়চোপড়ের ইঞ্জিনিয়ার। তবে গানপাগল,এটা বুঝতে পারলাম । এবং দেখলাম তিনি আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে “ফলোয়ার” তালিকায় ঝুলে আছেন । ততদিনে গানটার প্রেমে পড়ে যাওয়ায় অসংখ্যবার শোনা হয়ে গেছে “ছুঁয়ে দিলাম” । ভাবতে লাগলাম- “অপরিচিত একজনকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো ঠিক হবে ?” আবার নিজেই নিজেকে আশ্বস্ত করলাম- “তিনি তো গানের মানুষ । মানে আমাদেরই মানুষ । সমস্যা কি ? তাছাড়া তিনিই আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন,আমি না ।” বহু গবেষণার পর অবশেষে ১৭ জুলাই,২০১৫ সালের তপ্ত দুপুরে আমি এই ভদ্রলোক কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই । এবং একই দিনে, অর্থাৎ ১৭ জুলাই ২০১৫, চাঁদ রাতে (ইদের আগের রাত) তিনি আমার ফেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেন। সঙ্গে একখানা মেসেজ,যাতে তিনি ধন্যবাদ লিখে জানিয়েছিলেন যে আমার মত একজন সেলিব্রেটি (!) তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি দেখে তিনি বিস্মিত এবং পুলকিত । কারণ তিনি আমার ভক্ত সেই ক্লোজআপ ওয়ান থেকে । আমি স্বাগতম জানিয়ে তার “ছুঁয়ে দিলাম” গানের প্রশংসা করলাম । আরো ২/৩ টা বাক্য বিনিময়ের পর আমরা বিদায় নিলাম …

এরপর অনেকদিন আমাদের আর কোন কথা হয়নি । তিনি আমাকে জন্মদিনে উইশ করে মেসেজ পাঠান আর সবার মত,কিন্তু আর সবার হাজারখানেক মেসেজের নিচে চাপা পড়ে যায় তার উইশ,আমি রিপ্লাই করার সুযোগ পাইনা । তিনি আমার বেশীরভাগ স্ট্যাটাসে,ছবিতে লাইক দেন,মাঝে মাঝে কমেন্ট করেন, আমি বেশীরভাগ সময়ই মন্তব্য করিনা । কারণ সেই আমি তখন অন্য এক আমি । আমি চাইনা কেউ আমার ভদ্রতা থেকে কোন “রং সিগনাল” পাক । অনেকদিন পর কি কারণে,কেমন করে আমাদের কথোপকথন শুরু হল,তা অন্য কোনদিন বলব ।

সিরাজুম মুনির, তুমি গত বছরের মত এবছরেও আজকের তারিখটা ভুলে গেছ । আজকের দিনটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তুমি বোঝ ? পাঁচদিনের ব্যবধানে জন্মানো যে আমাদের দেখা হতে পারত হাসপাতালে পাশাপাশি দুটো ছোট্ট বিছানায়,যে আমাদের দেখা হতে পারত স্কুল কলেজে পড়াকালীন গানের প্রতিযোগিতাগুলোতে,যে আমাদের দেখা হতে পারত ক্লোজআপ ওয়ানে,সে আমাদের এত বছর পর দেখা হল মার্জ জাকারবার্গ সাহেবের বানানো “ফেসবুক” নামের এই সামাজিক অন্তর্জালে । অথচ তুমি গত বছরের মত আজকের তারিখটা ভুলে গেছ । প্রতিদিনের মত কপালে চুমু খেয়ে অফিসে চলে গেছ … ভেবনা আমি তোমার কোন বাহানা শুনব । এবং জেনে রাখো যে আমি আজ সত্যি রেগে আছি । আর ভাবছি কি শাস্তি দেয়া যায় তোমাকে…