আমাদের হুমায়ূনকে কেউ বিকৃত করলে আমরা তাকে ছুড়ে ফেলি: শাওন

বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে নিজের রঙ বদলায় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। বাংলা কথাসাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের ৬৯ তম জন্মদিনেও তার ব্যতিক্রম হল না। গুগল ডুডল নামে পরিচিত এ রঙ বদলের খেলায় হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ১৩ নভেম্বর গুগল হাজির হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের রূপ ধরে।

গুগলের এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে চায়ের পেয়ালা নিয়ে বসে আছেন হুমায়ূন আহমেদ। হলুদ পাঞ্জাবী পরে তার দিকে এগিয়ে আসছে তারই সৃষ্টি হিমু। আর পেছনে তরু পত্র দিয়ে লেখা গুগল শব্দটি।

সোমবার গুগলের এই ডুডল দেখে একই সাথে অবাক ও খুশি হয়েছেন অনেকেই। হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানালেন হুমায়ূনের ডুডলে আসার গল্প। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হল চ্যানেল আই অনলাইনের পাঠকদের জন্য-

২০/২১ দিন আগে অভিনেত্রী তনিমা হামিদ এর ফোন… গুগল বাংলাদেশ থেকে নাকি আমার ফোন নম্বর চাওয়া হয়েছে, তিনি নম্বর দেবার অনুমতি চাইছেন… আমি অবাক হলাম… আমাকে গুগল এর হঠাৎ কি প্রয়োজন পড়ল..! জবাবে তনিমা যা বললেন, আমি তো অভিভূত… তাড়াতাড়ি গুগলকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বললাম…
এরপর শুরু হলো আমার অপেক্ষার পালা… গুগল বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আর ফোন করেন না… আমি অস্থির হয়ে গেলাম… ১৫ মিনিটকে ১৫ ঘণ্টার মত মনে হল… আমার মনে হওয়া ১৬ তম ঘণ্টা পর (আদতে মাত্র ১৬ মিনিট) গুগল বাংলাদেশের তরফ থেকে ফোন দিলেন Hashmi Rafsanjani… জানালেন google.bd.com এবছর পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও প্রথমবারের মত বাংলাদেশের একজন লেখককে নিয়ে doodle করবে… এবং এক্ষেত্রে তাঁদের একমাত্র পছন্দ হুমায়ূন আহমেদ… কিঞ্চিত অস্বস্তি নিয়ে তিনি জানতে চাইলেন এ বিষয়ে আমার কোনো আপত্তি আছে কিনা…
আমি হেসেই ফেললাম… হুমায়ূন কে সম্মান জানানোতে আপত্তি..! তাও কি সম্ভব..!
তড়িঘড়ি করে অনুমতিপত্র আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজে সই করে সুখবরটা সবাইকে দেবার জন্য যখন আমার মন আকুপাকু করছে, তখন শুনি মহা দু:সংবাদ… এই খবর নাকি ১৩ নভেম্বর প্রথম প্রহর মানে রাত ১২.০১ মিনিট এর আগে কাউকে জানানো যাবে না…
মন খারাপ করে ঘুরঘুর করি আমি… কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে খবরটা… দখিন হাওয়ার বারান্দায় বসে আমি আকাশের কালো মেঘগুলোকে জানাই… পাশের ছাদের রেলিংএ বসা কর্কশ স্বরে ‘কা কা’ করা কাকটাকে জানাই… আমার বারান্দায় রাখা অযত্নে ফোটা অর্কিডের ফুলটাকে জানাই, নিষাদ নিনিতের পোষা বিরক্ত মুখভঙ্গির কচ্ছপ ভাতৃদ্বয় Humpty Dumpty কে জানাই… আমি ফিসফিস করে আমার হুমায়ূনকে জানাই, আমি নীরব চিৎকারে পুরো বিশ্বকে জানাই— “আমাদের এক কিংবদন্তী ছিলেন… আমাদের এক কিংবদন্তী আছেন… আমাদের হুমায়ূনকে কেউ ভালোবেসে সম্মান দিলে আমরা তাঁকে মাথায় তুলে রাখি… আমাদের হুমায়ূনকে কেউ বিকৃত করলে আমরা তাকে ছুড়ে ফেলি… আমরা হুমায়ূনকে ভালোবাসি… বড্ড ভালোবাসি…”

ছবি: তানভীর আশিক