চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘হালাল’ সাহিত্যের ব্লু-ওশেন বুঝতে পেরেছেন কাশেম বিন আবু বকর

সুবহানাল্লাহ বলে চুমু খাওয়া কিংবা আলহামদুলিল্লাহ বলে আই লাভ ইউ বলা সাহিত্য লিখে আলোচিত কাশেম বিন আবু বকর। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা তাকে নিয়ে প্রতিবেদন করার পর আবারও আলোচনায় এসেছেন তিনি।

এ বিষয়ে ফেসবুক পোস্টে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট  আরিফ জেবতিক বলেছেন, ‘হালাল’ সাহিত্যের বাজারটা কাশেম বিন আবু বকর ভাল বুঝেছেন।

তার পোস্টটি এরকম: ‘কাশেম বিন আবুবকর কোনো মহান লেখক নন, ফেলনা লেখকও নন। তিনি আরো আট দশজন বাজার চলতি লেখকের মতোই একজন বাজারি লেখক। বাজারি লেখক কোনো দোষের বিষয় না। আপনার প্রোডাক্ট কাঁচামরিচ বিক্রি, উনার প্রোডাক্ট বই। সবাইকেই তো করেটরে খেতে হবে।

‘মার্কেট সেগমেন্ট বলে একটা ব্যাপার আছে। শহুরে মিডলক্লাসের একটা আবেগী ব্যাপার স্যাপার থাকে। সেখানে জোছনা, বৃষ্টি এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সেগমেন্টের রাজা ছিলেন শরৎবাবু আর শেষ সম্রাট হুমায়ূন আহমেদ। এই সেগমেন্টে আবেগ বেশি থাকে। ‘বড়দের’ ব্যাপারগুলো কম থাকে কারণ মিডলক্লাস এই ট্যাবু থেকে বেরুতে পারে না সহজে। তবে একটা নিশ মার্কেটে তরুণ পাঠকদের আবার ‘হট’ বিষয়ে আগ্রহ থাকে, সেই সেগমেন্টে ‘পরীর তিন প্রেমিক’ নিয়ে আসেন ইমদাদুল হক মিলন। এটা একটা নিশ সেগমেন্ট। ইন্টারনেট জনপ্রিয় হওয়ার পরে এই সেগমেন্ট বই বিক্রি কমে যাওয়ার কথা।

‘তবে মোটাদাগে মিডিলক্লাসের সেগমেন্টে আমাদের জনপ্রিয়রা খেলছেন সেই বৃষ্টি-রোদ-জোছনা-রিক্সায় হুড খোলা মাঠে। সবাই হুমায়ূন আহমেদ হতে পারেন না, তাই বাজারে শতশত কপিক্যাট হুমায়ূন আহমেদ তৈরি হয়েছে এবং বইমেলা উপচে পড়ছে।

‘মার্কেটিংয়ের একটা আলোচিত কথা হচ্ছে ‘ব্লু ওশেন-রেড ওশেন।’ মানে যখন একই জলে সব হাঙ্গর কামড়াকামড়ি করতে থাকে তখন হাঙ্গরের রক্তে লাল হওয়া সেই বাজারের নাম রেড-ওশেন মার্কেট। কিন্তু আপনি যদি এমন একটা আলাদা সমুদ্র খুঁজে বের করতে পারেন যেখানে আর কোনো হাঙ্গর পৌঁছাতে পারবে না, সেখানে আপনি ভালো ব্যবসা একাকী করবেন। সেটা ‘ব্লু-ওশেন’ মার্কেট। বুদ্ধিমানেরা সবসময় ‘ব্লু-ওশেন’ মার্কেট খুঁজতে থাকে।

তিনি লিখেন, ‘কাশেম বিন আবু বকরেরটা ব্লু ওশেন মার্কেট। ‘হট’ ট্যাবুকে সেখানে যখন ধর্মের মোড়কে গেলানো হয়, তখন ভোক্তার সেই পাপবোধটা থাকে না, সে আগ্রহ নিয়ে গিলতে থাকে। ওহাবী ইসলামাইজেশনে যে জনপদ তৈরি হয়েছে সেখানে ‘পরীর ৩ প্রেমিক’ এর নিষিদ্ধ আগ্রহ আছে কিন্তু সংস্কার আর অনুশাসনের দৃশ্যমান প্রদর্শন বেড়ে যাওয়ায় সেই বই পড়ায় একটা পাপবোধ জন্মায়। সেই একই কাহিনী যদি ‘হালাল’ করে দেয়া হয়– তাহলে আর গ্রহণে কোনো বাধা থাকে না। কাশেম বিন আবুবকর সেই ‘হালাল’ সাহিত্যের ব্লু-ওশেন বুঝতে পেরেছেন। উনি স্মার্ট লোক।

‘ইতিহাসে এসব ক্র্যাপ টিকে থাকবে না। তবে মজার বিষয় হচ্ছে আমরা বইমেলায় যেসব তথাকথিত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের সঙ্গে চা-বিড়ি খাই, এরাও ইতিহাসে টিকে থাকবে না। এদেরটাও একই পরিমাণ আবর্জনা। আমরা আমাদের ভাই-বেরাদরদের মুখের ওপর সেটি বলতে লজ্জা পাই কিন্তু কাশেম বিন আবুবকরের বেলায় লজ্জা পাই না কারণ সে আমাদের চা-বিড়ির ইয়ারদোস্ত না। তফাৎ শুধু ঐ চা-বিড়িতেই, আর কিছু না।’