চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হারবাল ওষুধ, এলপি গ্যাস সিলিন্ডারসহ কী নেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে?

প্রায় দুই মাস আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ দেশি-বিদেশি বহু প্রতিষ্ঠান। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রায় সব ধরণের আয়োজনে রোহিঙ্গাদের জীবনে এসেছে স্বস্তি। প্রথম প্রথম ত্রাণের জন্য হাহাকার আর হুড়োহুড়ির চিত্র থাকলেও বর্তমানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে মনে হতে পারে বাংলাদেশের কোন শহর।

সরেজমিন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।

২৫ আগষ্টের পর পালিয়ে আসা সোয়া ৬ লাখ রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১৬টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে। উখিয়া থেকে টেকনাফমুখি প্রধান সড়ক থেকে ক্যাম্পগুলোতে ঢোকার মুখে সেনা পাহারা পেরিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশের পথে এগোতে থাকলে মনে হতে পারে কোন বহু পুরাতন বাজার ও জনপদ।

রেস্টুরেন্ট, মোবাইল ফোন রিপেয়ারিং শপ, মেমরি কার্ড-হেডফোনের ভ্রাম্যমাণ দোকান, যৌনশক্তি বর্ধক হারবাল ওষুধ, সোলার প্যানেল-এলইডি লাইট, এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানসহ কী নেই এসব ক্যাম্পে। কক্সবাজার-টেকনাফের স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা ওইসব দোকানের মালিক বলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পের ভেতরে এরকম অনেক দোকান গড়ে উঠেছে। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি

মোবাইল ফোনের মেমরি কার্ড-হেডফোনের ভ্রাম্যমাণ দোকানদার ইউসুফ একজন রোহিঙ্গা। পরিবারের ৬ জন সদস্যসহ বাংলাদেশে আসতে পেরে তিনি খুবই খুশি ও নিরাপদবোধ করছেন। প্রথম প্রথম থাকার জায়গা ও খাবারের কিছুটা সমস্যা হলেও এখন তার পরিবার প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।

কুতুপালং ক্যাম্পে ঢোকার মুখে তার দোকান সর্ম্পকে চ্যানেল আই অনলাইনকে ইউসুফ বলেন, খুবই অল্প বিনিয়োগে উখিয়ার স্থানীয় বাজার থেকে এসব কিনে দোকান দিয়েছি। অনেকের কাছে মোবাইল ফোন থাকায় বিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। এই ব্যবসার পুঁজি কীভাবে সংগ্রহ করলেন, এই প্রশ্নের জবাব দিতে আগ্রহী না ইউসুফ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মেমরি কার্ড, হেডফোন, ঘড়ি ও দা-ছুরির দোকান। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে মেমরি কার্ড, হেডফোন, ঘড়ি ও দা-ছুরির দোকান। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি

ইউসুফের মতোই এক রোহিঙ্গা কিশোর নানারকম ছুরি-বটি-দা বিক্রি করছে ক্যাম্পের চলাচলের পথে। কোথা থেকে এসব জিনিস কিনে এনে বিক্রি করছে, জিজ্ঞেস করা হলে সে কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকাকে নিরাপদ মনে করছিল। পাশের একজন জানালেন, উখিয়া বাজার থেকে এসব পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছে তারা। জ্বালানী কাঠ, বাড়ি তৈরিসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজে এসব ব্যবহার হয় বলেও জানান তিনি।

কুতুপালং ক্যাম্পের ভেতরে প্রবেশ করতে পাহাড় কেটে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তার দুপাশে গড়ে উঠেছে ছাউনি দেয়া ছোটবড় দোকান। এছাড়া টেবিল পেতে বা বস্তার উপরে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে রোহিঙ্গারা। সরকারি হিসাব মোতাবেক কুতুপালংয়ের স্থায়ী ক্যাম্পে ১৫ হাজার ও অস্থায়ী ক্যাম্পে ২ লাখ ৪৭ হাজার রোহিঙ্গা বাস করছে। সংখ্যার বিচারে কুতুপালংই সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প।

কুতুপালং ক্যাম্পের ঠিক মাঝামাঝিতে দেখা মিলল একটি মোবাইল ফোন রিপেয়ারিং শপের। শপের মালিক ও মেকানিক একজন রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে আসার পথে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন পানিতে পড়ে নষ্ট ও সমস্যা হয়েছিল। ওইসব মোবাইলই মূলত তিনি ঠিক করে থাকেন।

কুতুপালং ক্যাম্পে একটি মোবাইল ফোন রিপিয়ারিং শপ। ছবি-আব্দুল্লাহ আল সাফি
কুতুপালং ক্যাম্পে একটি মোবাইল ফোন রিপিয়ারিং শপ। ছবি-আব্দুল্লাহ আল সাফি

মোবাইল ছাড়াও তার দোকানে দেখা গেলো কয়েকটি ট্যাব, ওগুলোও রোহিঙ্গাদের বলে জানিয়েছেন তিনি। অনেক জিজ্ঞেস করেও তার নাম জানা গেল না।

ক্যাম্পে আসা অনেক রোহিঙ্গার কাছে মিয়ানমারের বিভিন্ন টেলিকমের সিম কার্ড রয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ক্যাম্পের ভেতরে কাজ করা একটি উন্নয়ন সংস্থার দোভাষী ও শিক্ষক হিসেবে কাজ করা একজন রোহিঙ্গা।  বাংলাদেশের তিনি তার পরিবার নিয়ে আসতে পারলেও মিয়ানমারে তার মা ও বোনরা এখনও আছেন বলে জানান তিনি। কুতুপালং ক্যাম্পের শেষ প্রান্তের পাহাড়ে উঠলে মিয়ানমারের ওইসব সিম দিয়ে মিয়ানমারে কথা বলা যায়, যার মাধ্যমে তিনি মা-বোনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।  তার নম্বরে ক্রেডিট শেষ হলে ছোটবোন তা রিচার্জ করে দেয়, এছাড়া তিনি ইন্টারনেট টেলিফোনির বিভিন্ন অ্যাপ দিয়েও নিয়মিত ভিডিও চ্যাট করে থাকেন মিয়ানমারে থাকা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। তবে ইদানিং ওইপাড়ে ইন্টারনেটের সংযোগ অবস্থা খারাপ হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

মিয়ানমারের সেনারা এখনও ওইপারে নির্যাতন করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনারা এখন আর নির্যাতন করছে না। তবে টাকা পয়সা কেড়ে নিচ্ছে নয়তো টাকা দিলে ভালভাবে চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে, ওইদিকে এখন খাবারের অনেক অভাব।

‘বাংলাদেশের ক্যাম্পে নানা ধরণের খাবার দেখে মা-বোনের কথা মনে হলে আমার অনেক খারাপ লাগে।’

মায়ের অনেক বয়স হওয়ার কারণে তাকে সহজে নিয়ে আসতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। শীতকালে যোগাযোগ ব্যবস্থা একটু ভাল হলে মাসহ তার পরিবারের অনেকে বাংলাদেশে আসবেন।

ক্যাম্পে বাস করা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুরা ক্যাম্পের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছবি- সাকিব উল ইসলাম
ক্যাম্পে বাস করা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুরা পরিপাটি পোশাকে ক্যাম্পের ভেতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ছবি- সাকিব উল ইসলাম

কুতুপালং ক্যাম্পে বিকেলের দিকে দেখা গেল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুরা পরিপাটি পোশাকে দল বেঁধে ক্যাম্পের বিভিন্ন প্রান্তে পরিচিত ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। পরিবার পরিজন ছাড়াও মিয়ানমারের একই এলাকার অনেকে এই ক্যাম্পে আছেন, একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় প্রায়ই তারা মিলিত হয়ে থাকেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

কুতুপালং ক্যাম্পের পরে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা বাস করছে বালুখালি ক্যাম্পে। বালুখালি ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় ৯১ হাজার রোহিঙ্গা আছে। বালুখালিতে বালুখালি ক্যাম্পে ঢোকার মুখে দেখা গেল বিরাট খাবার হোটেল। স্থানীয় জনগণ ও রোহিঙ্গা শ্রমিক দ্বারা পরিচালিত এই রেস্টুরেন্ট। প্রচুর পরিমাণে বাইরের লোক ত্রাণ দিতে ক্যাম্পে আসায় তাদের বেচাবিক্রিও বেশ ভাল।

বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে খাবারের হোটেল। এরকম অনেক হোটেল দেখা যায় বিভিন্ন ক্যাম্পে। ছবি- সাকিব উল ইসলাম
বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে খাবারের হোটেল। এরকম অনেক হোটেল দেখা যায় বিভিন্ন ক্যাম্পে। ছবি- সাকিব উল ইসলাম

আরেকটু ভেতরে যেতেই দেখা মিলল সোলার প্যানেল, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্সের পাশাপাশি কয়েকটি দোকান। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকতেই সোলার প্যানেল ব্যবহারের অভ্যস্ত থাকায় বাংলাদেশে আসার পরেও ওইসব পণ্য বেশ ভালই কিনছে বলে জানালেন ক্যাম্পের ভেতরে স্থাপন করা এক দোকানের মালিক জামাল শেখ। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট ও চার্জার ফ্যানের দোকান। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট ও চার্জার ফ্যানের দোকান। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি

সোলারের দোকানের সামনে বিক্রি হচ্ছে মুখের দাগ দূর করা ক্রিম থেকে শুরু করে যৌনশক্তি বর্ধক ট্যাবলেট ও হজম শক্তিবর্ধক হারবাল ওষুধসহ বিভিন্ন টোটকা ওষুধ।  বিক্রি কেমন হচ্ছে জিজ্ঞেস করতেই রোহিঙ্গা কিশোর বিক্রেতা লাজুক হাসি দিল। 

বালুখালি ক্যাম্পের একদম ভেতরে দেখা মিলল একটি বেশ বড় আকারের দোকানের, সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের সঙ্গে বাইরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে গ্যাসের চুলা ও এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। দোকানের ছবি তোলা ও কথা বলায় বেশ আপত্তি থাকায় ক্রেতা কারা ও বিক্রি কেমন হচ্ছে সে সর্ম্পকে বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি।

বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে এলপিগ্যাসের সিলিন্ডারের দোকান। গ্যাসের চুলা-সোলার প্যানেল সবই বিক্রি হচ্ছে। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি
বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে এলপিগ্যাসের সিলিন্ডারের দোকান। গ্যাসের চুলা-সোলার প্যানেল সবই বিক্রি হচ্ছে। ছবি- আব্দুল্লাহ আল সাফি

আগত অনেক রোহিঙ্গার দোকান গড়ে তোলা ও বর্তমান জীবনমান সর্ম্পকে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা মিজান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, প্রথম প্রথম এরা (রোহিঙ্গারা) বেশ সমস্যায় থাকলেও বর্তমানে এরা স্থানীয় বাংলাদেশীদের চেয়ে অনেক আরামে আছে। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসা সবই ফ্রি। তাছাড়া অনেক রোহিঙ্গা পরিবার আছে যাদের এক পরিবারের মধ্যে একাধিক ত্রাণ কার্ড রয়েছে, যা দিয়ে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ত্রাণ তুলে নিচ্ছে। এছাড়া সাধারণ জনগণের প্রতিদিনের দেয়া ত্রাণতো পাচ্ছেই।

(১) পরিপাটি পোশাকের রোহিঙ্গারা ত্রাণ সংগ্রহ করে ফিরছেন। (২) ত্রাণ সংগ্রহ করে অপেক্ষায় কয়েকজন রোহিঙ্গা, পরিবারের আরো সদস্য ত্রাণের লাইনে তাই অপেক্ষা। ছবি- সাকিব উল ইসলাম
(১) পরিপাটি পোশাকের রোহিঙ্গারা ত্রাণ সংগ্রহ করে ফিরছেন। (২) ত্রাণ সংগ্রহ করে অপেক্ষায় কয়েকজন রোহিঙ্গা, পরিবারের আরো সদস্য ত্রাণের লাইনে তাই অপেক্ষা। ছবি- সাকিব উল ইসলাম

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ঘরে প্রবেশ করে স্থানীয় বাসিন্দা মিজানের কথার কিছুটা মিল খুঁজে পাওয়া গেল। বাঁশের তৈরি মাচা করে ত্রাণসামগ্রী স্তুপ করে রাখা হয়েছে।

এছাড়া কয়েকটি পরিবারকে পাওয়া গেলো, যারা একসঙ্গে ৭/৮ জন এলেও পরে ৩ বা ৪ জনে ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা পরিবার হিসেবে ত্রাণ সুবিধা নিচ্ছে। কয়েকটি পরিবারের কক্ষের দরজার উপরে লাগানো আলাদা আলাদা নম্বর থাকলেও ভেতরে খোলা অবস্থা দেখা গেছে এবং তারা একই পরিবারের সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরের ভেতরে। ছবি - সাকিব উল ইসলাম
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরের ভেতরে। ছবি – সাকিব উল ইসলাম

বিভিন্ন ক্যাম্পের চলাচলের পথে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ নিয়ে যাবার চিত্র চোখে পড়ে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সংগ্রহ করা ত্রাণ রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে ও ভিতরে বিক্রিও করছে। অতিরিক্ত ত্রাণ বিক্রি করে অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে থাকেন বলে জানান একজন রোহিঙ্গা।

বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করছে এক রোহিঙ্গা। ছবি- সাকিব উল ইসলাম
বালুখালি ক্যাম্পের ভেতরে ত্রাণ সামগ্রী বিক্রি করছে এক রোহিঙ্গা। ছবি- সাকিব উল ইসলাম
সহকারি কমিশনার রেজাউল করিম
কুতপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম

কুতপালং নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) সহকারি কমিশনার রেজাউল করিম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, রোহিঙ্গারা পুরুষ ও নারী-শিশু আলাদা আলাদা বুথে নিবন্ধন করছে। তবে এতো সংখ্যক রোহিঙ্গার মধ্যে পরিবারভিত্তিক সমন্বয় রাখা বা ত্রাণ সুবিধার জন্য বারবার তারা রেজিষ্ট্রেশন করছে কিনা, তা যাচাই করা মুশকিল। মাসিক ত্রাণের কার্ড ও এককালীন ত্রাণের কার্ড থাকলেই তারা ত্রাণ পাচ্ছে।

উখিয়ায় স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর ১৯ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৩৬ ট্রাকের মাধ্যমে ৯৬ টন ত্রাণ জমা হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০০ টন বেসরকারি ত্রাণ সাহায্য এসে জমা হচ্ছে ওই নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে।  কিছুদিন আগে আরও বেশি পরিমাণে ত্রাণ জমা হতো বলেও জানা গেছে।

জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৮ নভেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজারের ৪টি খাদ্য গুদামে প্রাপ্তি ও প্রদানের পর ৯৭৭ টন চাল, ৮১ টন ডাল, ৯৮ হাজার ২২৯ লিটার তেল, ৬৩ টন লবণ, ৮৭ টন চিনি, ৯ হাজার ৪০৮ কেজি আটা, ৮১ হাজার ৪৭০ কেজি গুঁড়ো দুধ, ২৫ কেজি মুড়ি, ১৬ হাজার ১০০ পিস ও ৪৮৯ বান্ডেল কম্বল, ৫১১টি তাঁবু ও ত্রিপল মজুদ রয়েছে।

একজন পুলিশ সদস্যকে পেটানো ও ডাকাত পরিচয়ে টিউবওয়েল মিস্ত্রিদের প্রহারের পরে একজন নিহত হবার ঘটনার পরে ত্রাণ সরবরাহের গতি কিছুটা কমেছে বলে জানান স্থানীয়রা।

২৫ আগষ্টের পরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১৬টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে।

(কুতুপালং, বালুখালি, পালংখালি ও শফিউল্লাহ কাঁটা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে প্রতিবেদন)