চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

নদীভিত্তিক পর্যটন বিকাশে অন্যরকম ভাসমান পর্যটন মেলা

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী ও পানিভিত্তিক পর্যটন বিকাশের প্রয়াসে হাজার লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হলো প্রাণবন্ত এক ভাসমান পর্যটন মেলা। দেশের সর্ববৃহৎ লঞ্চে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সারাদিন ধরে চলে বহুমাত্রিক আয়োজনে সাজানো এই মেলা।

রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে রওনা হয় সুন্দরবন ১০ লঞ্চটি। পর্যটন ব্যক্তিত্ব, দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকর্মীসহ লঞ্চে আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। লঞ্চটি চলতে শুরু করার পরপরই সবার হাতে পৌঁছে যায় সকালের নাস্তা। মেলায় পরিবার নিয়া আসা অতিথি ও গণমাধ্যমকর্মীদের দেয়া হয় লঞ্চের কেবিনের চাবি।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরে দর্শনার্থীরা ঘুরে দেখেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্টল।

দ্বিতীয়বারের মতো ভিন্নধর্মী এই আয়োজন প্রসঙ্গে আখতারুজ্জামান খান কবির চ্যানেল আই অনলাইকে বলেন, ‘এরকম ভাসমান মেলার আয়োজন অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার মতো। এরকম আয়োজন আরো হওয়া দরকার। আমরা চাই প্রাইভেট সেক্টর এগিয়ে আসুক। বিকশিত হোক আমাদের ‘রিভার ট্যুরিজম।’ সেই সঙ্গে সরকার ও লোকাল কমিউনিটি যেন ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতায় পাশে থাকেন আমাদের সে আহ্বান থাকবে।’

আয়োজক সংগঠনের সদস্য টাচ ক্রিয়েশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মাহবুব হোসাইন সুমন বলেন, ‘এবার দ্বিতীয়বারের মতো ভাসমান এই পর্যটন মেলা আয়োজন করা হল। বাংলাদেশে ট্যুরিজম নিয়ে কাজ করে এমন ১৩টি ট্যুর অপারেটরের সংগঠন ‘বি ফিফটিন’ এই আয়োজনের উদ্যোক্তা। দেশের নদী ভিত্তিক পর্যটন প্রসারে আমরা সামনে এরকম আরও উদ্যোগ নিতে আশাবাদী।’

 

ভাসমান এই পর্যটন মেলায় অভিভাবকদের সঙ্গে আসা ছোট্ট  শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। রঙ পেন্সিল আর রঙ নিয়ে সাদা কাগজে আকা আঁকিতে মেতে উঠে প্রায় শতাধিক শিশু। অভিভাবকরাও ছিলেন নানামুখি ব্যস্ততায়, কেউ সেলফি তুলছেন আর কেউ আনমনে নদীর দিকে তাকিয়ে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য্য দেখছেন।

জুম্মার নামাজের আগ দিয়ে লঞ্চ থামে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ঘাটে। জুম্মার নামাজের জন্য অনেকেই লঞ্চ থেকে নেমে যান মসজিদে। নামাজ ও সাময়িক বিরতির পরে দুপুরের খাবারের আয়োজন। এরইমধ্যে লঞ্চ আবার চলতে শুরু করে চাঁদপুরের দিকে। এরই মাঝে সুর্য অনেকটা দুর্বল হয়ে পশ্চিম দিকে হেলেছে। বিকেলের আগে আগে লঞ্চও ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে ঢাকার পথে।

ফিরতি পথে ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করতে ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠানের ব্যবস্থা। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীরা বাদ্যযন্ত্র আর গানের তালে নেচে গেয়ে মাতিয়েছেন অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে। এরপরে মেলার আকর্ষনীয় আয়োজন র‍্যাফেল ড্র। বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিথিদের উল্লাসের সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে সন্ধ্যা। বিকেলের নাস্তা খেতে খেতে লঞ্চ চলে আসে রাজধানীর বুকে। বিদায় বেলায় লঞ্চে থাকা সবার চোখেমুখে ছিল আনন্দের রেশ। তাদের চোখমুখ যেন জানান দিচ্ছিল এরকম আরও আয়োজনের প্রত্যাশা।

৪০টির বেশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট ব্যবসাই সংগঠন TOAB,  BDINBOUND, TDAB, ATAB এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। আর এই আয়োজনের  সঙ্গে ছিল বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, পর্যটন কর্পোরেশন এবং টুরিস্ট পুলিশ।

ছবি: লেখক