চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘হাওয়া ভবন ও পিন্টুর বাসভবনে ২১ আগস্ট হামলার ষড়যন্ত্র হয় ’

তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় বনানীর হাওয়া ভবন ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছে সাক্ষী আবু হেনা মো. ইউসুফ।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৫ তম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আবু হেনা মো. ইউসুফের দেয়া জবানবন্দির আলোকে যুক্তিতর্কে এ কথা তুলে ধরা হয়।

এডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান যুক্তিতর্কে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী আবু হেনা মো. ইউসুফ পুলিশের (সিআইডি) তৎকালীন পরিদর্শক রমনা বটমূলে হামলা মামলার তদন্ত কাজে থাকার সময় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে অন্যান্য গ্রেনেড হামলার পাশাপাশি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তখনও মুফতি হান্নানকে ২১ আগস্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি। ২১ আগস্ট ঘটনায় মুফতি হান্নানের স্বীকারের বিষয় তৎকালীন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা খোদা বখস চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান ও রুহল আমীনকে অবহিত করলে তারা তাতে গুরুত্ব দেয়নি বরং ২১ আগস্ট মামলা নিয়ে বিরত থাকতে বলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে বলেন, সাক্ষি আবু হেনা মো. ইউসুফ তার সাক্ষ্যে মুফতি হান্নানকে তার জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে ২১ আগস্ট হামলায় ১০ আসামীর সম্পৃক্ততা বিষয় তুলে ধরেন। ১০ আসামী হলেন-আবদুস সালাম পিন্টু, খোদা বখস চৌধুরী, লুৎফুজ্জামান বাবর, মুফতি হান্নান, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবু জান্দাল,মুন্সি আতিকুর রহমান, রুহুল আমীন, তারেক রহমান ও মাওলানা তাজউদ্দিন। সাক্ষি ইউসুফকে মুফতি হান্নান জানায়, তারেক রহমান ২১ আগস্ট হামলা বাস্তবায়নে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন। সে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর তাদের সহায়তা দেন।

যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষে ৩৮ তম সাক্ষী থেকে ৬২ তম সাক্ষী পর্যন্ত জবানবন্দির অংশ বিশেষ উপস্থাপন করা হয়।সাক্ষীর মধ্যে প্রথম ৬১ জন এ মামলার প্রথম চার্জশিটের সাক্ষী। ৬২ নম্বর সাক্ষি থেকে এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রের সাক্ষি। আজ উপস্থাপিত সাক্ষিদের মধ্যে ঘটনার সাক্ষিরা তাদের জবানবন্দিতে বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা শেষে জয় বাংলা স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। হামলায় বিকট আওয়াজ হয়। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে শেষ করতেই এ হামলা চালানো হয়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। মামলার কার্যক্রম আগামী ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, আগামী ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম যথারীতি চলবে।

২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন। মামলার আসামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। এ মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদাবক্স চৌধুরী, লে.কমান্ডার (অব:) সাইফুল ইসলাম ডিউক এবং মামলার সাবেক তিন তদন্ত কর্মকর্তা- সিআইডি’র সাবেক এসপি রুহুল আমিন, সিআইডি’র সাবেক এএসপি আতিকুর রহমান ও আবদুর রশিদসহ মোট ৮ জন জামিনে রয়েছেন। তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এটিএম আমিন, লে.কর্নেল (অব:) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক।

বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়।