বিএনপি নেতা তারেক রহমানের তৎকালীন রাজনৈতিক কার্যালয় হাওয়া ভবনসহ আটটি স্থানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নেয়া হয় বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান।
মঙ্গলবার পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক শুনানিতে তিনি এ বক্তব্য পেশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত রেখে মামলার কার্যক্রম আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।
আদালতের আদেশে আজ বলা হয়, আগামী ৬,৭ ও ৮ নভেম্বর টানা এ মামলায় যুক্তিতর্ক চলবে। বর্তমানে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করছে। এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষকে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি যুক্তিতর্কে বলেন, রাজধানীর বনানীর হাওয়া ভবন, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ-ই আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে হামলার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিয়ে ২১ আগস্ট হামলা চালানো হয়।
তিনি বলেন, হাওয়া ভবনের বৈঠকে তারেক রহমান আসামিদের ঘটনা বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রশাসনিক সহায়তার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন যা আসামির জবানবন্দি ও সাক্ষ্যে উঠে এসেছে।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে যে সব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় তা ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভয়াবহ ওই হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় অনেকে। যাদের মধ্যে অনেকেই ওই হামলার কারণে এখনো দূর্বিসহ জীবযাপন করছেন।
যুক্তিতর্কে রাষ্ট্রপক্ষ আজ ঘটনাস্থালের কোন কোন স্থানে গ্রেনেডগুলো বিস্ফোরিত হয় এবং হতাহতের ঘটনার ভয়াবহতা বিষয়ে বর্ননা দেন। রাষ্ট্রপক্ষ গনমাধ্যমকর্মীসহ মামলায় দেয়া বিভিন্ন সাক্ষ্য আজ উল্লেখ করেন। ওই ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহতরা কোথায় এবং কোন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তাও তুলে ধরে হয়।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, কাজী জাফরউল্লাহ, ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী ওইসময় তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনার বর্ণনা দেন।
প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে সহায়তা করেন আইনজীবী খন্দকার আবদুল মান্নান, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা, আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবী নজরুল ইসলাম, আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
চাঞ্চল্যকর ও ভয়াবহ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে। স্পর্শকাতর ও আলোচিত এ মামলায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। এরপর আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য পেশ ও আসামীপক্ষ সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়।