চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হঠাৎ শিকার!

এই শহরে, ঢাকা শহরে, একলা চলা মানুষের বিপদ ও আপদের কমতি নেই। যখন তখন শিকার হয়ে যেতে পারে যে কেউ। ঈদ-পার্বণকে কেন্দ্র করে শহরের পথে, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন আর লঞ্চঘাটে আপদ ওৎ পেতে থাকে অতিমাত্রায়।

১. ভরদুপুর কিংবা সন্ধ্যা নামার একটু আগে। আপনি একটু আনমনে হাঁটছেন ফুটপাত ধরে। ব্যস শিকার হয়ে যাবেন। খুব বন্ধুর মতো ওরা আপনাকে ঘিরে ধরবে। ঘাড়ে হাত দেবে বন্ধুত্বমাখা শব্দ দিয়ে। এরই মধ্যে একজন বলবে, ‘যা আছে দিয়ে দাও। খবরদার চেঁচামেচি করবে না। আমাদের কাছে অস্ত্র আছে।’ সঙ্গে এটাও বলবে মুখ যেন হাসি হাসি রাখেন আপনি। শত শত মানুষ যাবে আপনার দুদিক দিয়ে কেউ টেরও পাবে না কী ঘটছে। তারা দেখছে বন্ধুরা একটু ঠাট্টা-তামাশা করছে হয়তো!

২. একটু নির্জন পথ বা ফুটপাত। হন হন করে ছুটছেন আপনি। উল্টো দিক থেকে একজন বা দুজন, ইচ্ছে করে আপনার গায়ে পড়বে। তারপর ভদ্রতার বশে আপনি যেই একটু সরি বলবেন কী বলবেন না, আপনাকে আটকে দিয়ে বলবে কেনো তাদেরকে ধাক্কা দিলেন? এরমধ্যে আরও দু’একজন জুটে যাবে। তারা প্রমাণ করতে চাইবে আপনি ধাক্কা দিয়েছেন, আঘাত দিয়েছেন। বলতেই রাস্তার পাশে নিয়ে যাবে আপনাকে। তারপর জানিয়ে দেবে আসল রূপ। আপনার হাত টেনে স্পর্শ করিয়ে দেবে ওদের কোমরে রাখা অস্ত্র। ভয়ে ঠান্ডা হয়ে যাওয়া আপনি একে একে দিয়ে দিতে বাধ্য হবেন সব কিছু।

৩. সন্ধ্যার পর বা একটু রাতে যদি একা আপনি কোনো এটিএম বুথে প্রবেশ করেন শিকার হয়ে যেতে পারেন শহরের সবখানেই। অতি সম্প্রতি ঘটলো এটা। একটু রাতে কাকরাইল এলাকায় এক সংবাদকর্মী একটি বুথ থেকে টাকা তুলে বেরুতেই আচমকা একজন একটা কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘আমেরিকান নটিবয়’ শব্দটা লিখে দিন’। ততোক্ষণে সংবাদকর্মীটি যা বোঝার বুঝে নিলেন। বিপদ অনিবার্য জেনেই একটু শক্ত হওয়ার চেষ্টা করলেন। দেখলেন একটু দূরে দাঁড়িয়ে আরও দুই তরুণ। তিনি প্রথমে বলতে চেষ্টা করলেন তার হাতের লেখা ভালো না। তাতে কাজ হলো না। একবার লিখে দেয়ার পর অনেকটা নির্দেশের সুরে বলা হল,‘বড় হাতের অক্ষরে লিখে দেন’। সংবাদকর্মী আগন্তুকের নির্দেশ পালন করলেন অক্ষরে অক্ষরে। তারপর যা হবার তা-ই হলো। দুদিক থেকে আরও দুজন এগিয়ে এসে ঘিরে ধরলো তাকে। টাকা-মোবাইল ফোন, ঘড়ি সব কেড়ে নিলো নিপূণ দক্ষতায়। 

৪. বাস, লঞ্চ কিংবা ট্রেনে, একা যাত্রী আপনি। পাশের আসনের মানুষটিই হতে পারে আপনার বিপদের কারণ। মাঝে মধ্যে বিপদটা হতে পারে জীবনঘাতি। তেমন কিছু না- আপনার সঙ্গে হয়ত আলাপ জমাবে। খুঁজবে একটু সুযোগ। তারপর রুমাল বা অন্য কোনখান থেকে কিছুটা চেতনা নাশক ছুঁইয়ে দেবে আপনার নাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি চলে যাবেন গভীর ঘুমের কাছে। সেই ঘুম এমনি যে তা আর নাও ভাঙতে পারে এই জীবনে।

৫. পুলিশ শহরের বিভিন্ন জায়গায় লাল রঙে লিখে দিয়েছে-‘অপরিচিত মাইক্রোবাস/ প্রাইভেটকারে চড়বেন না’। চড়লেই বিপদ। টাকা পয়সা-সোনাদানা-মোবাইল ফোনতো যাবেই, সঙ্গে জীবনটাও যেতে পারে। এমন ঘটেছে অনেক। এখনো ঘটছে।

৬. একদা এ শহরে তিন চাকার টেম্পো চলতো। সে জায়গা এখন দখল করেছে ‘লেগুনা’ নামে চার চাকার এক যান। দিনে যেমন তেমন, রাতে যাত্রী হয়ে যে কেউ শিকার হয়ে যেতে পারেন ছিনতাইয়ের। এই যানগুলো এমনই যে পথে পথে লোক নামায় আর তুলে। পথের মাঝে যদি আপনি যাত্রী হন, একটু পরই হয়তো দেখবেন আপনি অথবা দুএকজন ছাড়া বাকি সবাই ছিনতাইচক্রের। গাড়ি চলবে আর শূন্য হতে থাকবে আপনার পকেট। তারপর ওদের সুবিধামত কোনো জায়গায় নামিয়ে দেয়া হবে আপনাকে। সেসময় বলা হবে-‘খবরদার কেউ চিল্লাবেন না। বোম মেরে উড়িয়ে দেবো।’

৭. আপনি একা বাসে কিংবা কোনো খাবার হোটেলে। ওরা যদি জেনে যায় আপনার কাছে ভালো অংকের টাকা আছে আর আছে দামি মোবাইল সেট। তাহলে টার্গেট হয়ে গেলেন। ওরা অনেক লোকের সামনেই এমন একটা আওয়াজ দেবে যে আপনি ‘আদম বেপারি’ অথবা ‘প্রতারক’। ওদের টাকা মেরে দিয়ে, জীবন নষ্ট করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ব্যস আপনাকে বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে যাবে। বাসের যাত্রীরা আপনাকে জঞ্জাল ভেবে একটা কথাও বলবে না।

এসব বিপদ-আপদ ছাড়াও এই নগরে শিকার হয়ে যাওয়ার আরও অনেক অনেক কিছু আছে। শত উদ্যোগ নিয়েও ছিনতাই বন্ধ করা যায়নি-যার বেশিরভাগ শিকার নারী।

নানা সন্ত্রাসীর নাম করে ফোনে চাঁদা চাওয়ার ঘটনা এখনো শেষ হয়নি। অপহরণ, অপহরণের পর মেরে ফেলার ঘটনাতো আছেই।

আর, সঙ্গে মাঝে মাঝে আছে ‘ক্রস ফায়ার’ আর ‘বন্দুক যুদ্ধ’ নামের আপদ-বিপদ। আমি, আমরা যে কেউ, যেকোনো সময় শিকার হয়ে যেতে পারি এসবের!

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)